ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের প্রধান ফটকের দুই পাশের সীমানাপ্রাচীরের লোহার গ্রিল চুরি হয়ে গেছে
ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের প্রধান ফটকের দুই পাশের সীমানাপ্রাচীরের লোহার গ্রিল চুরি হয়ে গেছে

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল

চুরির ঘটনায় উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চুরির ঘটনা ঘটছে। চোরেরা রোগী ও তাঁদের স্বজনদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইলসহ বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। চুরি হয়ে যাচ্ছে হাসপাতালের দরজা, লোহার গ্রিল, বিদ্যুতের তার, পাখা ও এসির যন্ত্রাংশ। নিরাপত্তারক্ষী না থাকায় চুরির ঘটনা ঘটছে বলে চিকিৎসক ও কর্মকর্তা–কর্মচারীরা জানিয়েছেন।

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের কার্যালয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি শহরের মুজিব সড়কের পাশের হাসপাতালের প্রধান ফটকের দুই পাশের সীমানাপ্রাচীরের ১৬টি লোহার গ্রিলের মধ্যে ১৩টি চুরি হয়ে গেছে। প্রায় প্রতি রাতেই চুরির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু কোনো চোর ধরা পড়ছে না। ব্যস্ত ওই সড়ক দিয়ে প্রতি রাতে পুলিশের গাড়ি টহল দেয়। তারপরও চুরি থামছে না।

স্থানীয় লোকজন ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯১৭ সালে ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ হাসপাতাল বর্তমানে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। শহরের রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিতে এ হাসপাতালেই প্রথম আসেন। গুরুতর কোনো রোগী এলে তাঁদের তো এ হাসপাতাল থেকে অন্তত চার কিলোমিটার দূরের ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৯১ সালে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হওয়ার আগে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালই ছিল শহরবাসীর চিকিৎসাসেবা প্রদানের একমাত্র প্রতিষ্ঠান। কয়েক বছর আগ থেকে এই হাসপাতালে চুরির ঘটনা ঘটছে। বর্তমানে চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়া হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা–কর্মচারী এবং রোগী ও স্বজনেরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। প্রতি মাসে ৮–১০টি চুরির ঘটনা ঘটছে।

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে চিকিৎসাসেবা নিতে আসার পর ফরিদপুর সদরের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের রহমান শেখের (৫০) মানিব্যাগ চুরি হয়েছে। তিনি বলেন, মেয়েকে নিয়ে তিনি গত ২৬ জানুয়ারি এ হাসপাতালে এসেছিলেন। রাতে তিনি মহিলা ওয়ার্ডের বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় চোর তাঁর মানিব্যাগটি চুরি করে নিয়ে যায়।

এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে মোবাইল খুইয়েছেন নগরকান্দা উপজেলার কোদালিয়া এলাকার লাইলী বেগম। তিনি গত ১৭ ডিসেম্বর তাঁর ডায়রিয়া আক্রান্ত ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে তাঁর দুই দিন অবস্থান করতে হয়। রাতের কোনো এক সময়ে তাঁর মুঠোফোনটি চুরি হয়ে যায়।

জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চুরি রোধে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এক সভায় ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ছিদ্দীকুর রহমান নৈশপ্রহরী না থাকাসহ তাঁর বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন। ওই সভায় আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে নৈশপ্রহরী নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মার্চ মাস থেকে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ দেওয়া হয়।

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে নিয়োজিত ফরিদপুরের সিভিল সার্জন মো. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, ‘জন্মলগ্ন থেকে এ হাসপাতালে নিরাপত্তারক্ষীর কোনো পদ নেই। এ জন্য অনেকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং কখনো কখনো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েই লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ ব্যাপারে আজ পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সাড়া পাইনি।’

সিভিল সার্জন জানান, ২০২৩ সালের মার্চে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চারজন নিরাপত্তারক্ষী নেওয়া হয়। তাঁদের বেতনের টাকা চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের কাছ থেকে নেওয়া হতো। তবে তাঁদের নিয়োগের পরও চুরি হচ্ছিল। পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা–কর্মচারীরা এ ব্যাপারে নিজেদের বেতনের টাকা দেওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। ফলে চার মাস পর এ উদ্যোগ বন্ধ করে দিতে হয়।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আবদুল গফফার বলেন, ‘হাসপাতালে চুরি হওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা আছে। এই চুরি বন্ধে হাসপাতাল এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।