কুমিল্লার চার উপজেলায় তৃতীয় ধাপে আগামীকাল বুধবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। এতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত তিন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের স্বজনেরা (ছেলে, ভাই ও ভাতিজা) নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এর বাইরে দলটির প্রভাবশালী পরিবারের দুই ভাই ও মা-মেয়ে ভোটের মাঠে আছেন। তাঁরা চাইছেন উপজেলা প্রশাসনের কর্তৃত্ব নিজেদের পরিবারের মধ্যে রাখতে। ফলে চারটি উপজেলাতেই আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের মধ্যেই ভোটের লড়াই হচ্ছে। এবারের ভোটকে পরিবারগুলোর মর্যাদার লড়াই হিসেবে মনে করছেন ভোটাররা।
উপজেলা চারটি হলো–মুরাদনগর, দেবীদ্বার, ব্রাহ্মণপাড়া ও বুড়িচং।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মুরাদনগর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী হয়েছেন। তাঁরা হলেন আহসানুল আলম (আনারস প্রতীক), গোলাম সারওয়ার হাসান (ঘোড়া প্রতীক), বসির আহম্মদ (কাপ-পিরিচ প্রতীক) ও রাশেদ আলম হায়দার (দোয়াত-কলম প্রতীক)।
মুরাদনগর উপজেলায় এ উপজেলায় আহসানুল ও হাসানের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বলে ধারণা করছেন ভোটাররা। আহসানুল আলম কুমিল্লা-৩ ( মুরাদনগর) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। আহসানুল আলম আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপকমিটির সদস্য। অন্যদিকে হাসান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
এ উপজেলায় আহসানুল ও হাসানের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বলে ধারণা করছেন ভোটাররা। আহসানুল আলম কুমিল্লা-৩ ( মুরাদনগর) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। ২০১৯ সালেও আহসানুল আলম উপজেলার চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। এবারও তিনি প্রার্থী হয়েছেন। আহসানুল আলম আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপকমিটির সদস্য। অন্যদিকে হাসান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
এবারের নির্বাচনেও বিজয়ী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রার্থী আহসানুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমি গতবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান হয়েছি। আমার তো কোনো বদনাম নেই। এই নির্বাচনেও বিজয়ী হব।’
আহসানুলের বাবা ও সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শিক্ষিত, স্মার্ট ছেলে হিসেবে কিশোর সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। তাই তাঁকে প্রার্থী করিয়েছি।’
এদিকে দেবীদ্বার উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দুই পরিবারের তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী মো. মামুনুর রশিদ, ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী শাহিদা আক্তার ও দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী খাদিজা বিনতে রোশন।
কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (বর্তমানে অব্যাহতিপ্রাপ্ত) আবুল কালাম আজাদের ছোট ভাই মামুনুর রশিদ। মামুনুর রশিদ কুমিল্লা উত্তর জেলা যুবলীগের সদস্য। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলীর স্ত্রী শাহিদা আক্তার ও মেয়ে খাদিজা বিনতে রোশন। তাঁরা এক পরিবার থেকে মা-মেয়ে নির্বাচন করছেন। ভোটাররা বলছেন, নির্বাচনে মূলত শাহিদা ও মামুনুরের মধ্যে ভোটের লড়াই হবে।
এ বিষয়ে প্রার্থী মামুনুর রশিদ বলেন, ‘তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের চাপে প্রার্থী হয়েছি।’ আর জয়ের আশা প্রকাশ করে আরেক প্রার্থী শাহিদা আক্তার বলেন, ‘নির্বাচনে ইনশা আল্লাহ জিতব।’
দল প্রার্থিতা সবার জন্য উন্মুক্ত রেখেছে। সারা দেশে বড় বড় নেতার ভাই, ছেলে, স্ত্রী, সন্তানেরা প্রার্থী হয়ে ইতিমধ্যে অনেকেই জয়ী হয়েছেন। দেবীদ্বারের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এবার মামুনুরকে চায়।প্রার্থী মামুনুরের বড় ভাই ও সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ
উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে মামুনুরের বড় ভাই ও সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দল প্রার্থিতা সবার জন্য উন্মুক্ত রেখেছে। সারা দেশে বড় বড় নেতার ভাই, ছেলে, স্ত্রী, সন্তানেরা প্রার্থী হয়ে ইতিমধ্যে অনেকেই জয়ী হয়েছেন। দেবীদ্বারের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এবার মামুনুরকে চায়।’
এদিকে মামুনুরের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী বলেন, ‘এক পরিবারের মধ্যে সব পদ যেতে পারে না। মামুনুরের ভাই এমপি, বাবা ইউপি চেয়ারম্যান।’
অন্যদিকে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন চার প্রার্থী। তাঁরা হলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আবু তৈয়ব (ঘোড়া প্রতীক), সোহরাব খান চৌধুরী (আনারস প্রতীক), মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম (দোয়াত-কলম প্রতীক) ও সরকার জহিরুল হক (টেলিফোন প্রতীক)। তাদের মধ্যে শুধু জহিরুল বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বাকি তিন প্রার্থী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আবু তৈয়ব ও সোহরাবের মধ্যে। আবু তৈয়বের চাচা কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এম এ জাহের। জাহেরের বড় ভাই ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত মুহাম্মদ আবু তাহেরের ছেলে আবু তৈয়ব। আবু তৈয়ব কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক। এ ছাড়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন চার প্রার্থী। তাঁরা হলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আবু তৈয়ব (ঘোড়া প্রতীক), সোহরাব খান চৌধুরী (আনারস প্রতীক), মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম (দোয়াত-কলম প্রতীক) ও সরকার জহিরুল হক (টেলিফোন প্রতীক)।
এ প্রসঙ্গে আবু তৈয়ব বলেন, ‘এ উপজেলার মানুষের জন্য আমাদের পরিবারের কাজ আছে। এবারের নির্বাচনে দল–মতনির্বিশেষে ভোট পাব।’ সংসদ সদস্য এম এ জাহের বলেন, আবু তৈয়ব ছাত্রলীগ থেকে উঠে আসা রাজপথের ত্যাগী নেতা।
আরেক প্রার্থী সোহরাবের পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মাঠে নেমেছেন। সোহরাব খান চৌধুরী বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে নিশ্চিত জয়ী হব। পুরো আওয়ামী লীগ আমার পক্ষে এককাট্টা।’
বুড়িচং উপজেলায় আখলাক ও তারেক এ দুই ভাইয়ের মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বুড়িচং উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন চারজন। তাঁরা হলেন ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী আখলাক হায়দার, টেলিফোন প্রতীকের প্রার্থী মো. তারেক হায়দার, আনারস প্রতীকের প্রার্থী মো. বাছির খান ও দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী মো. রেজাউল করিম। তাঁদের মধ্যে আখলাক ও তারেক আপন ভাই। আখলাক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান। তারেক উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য। তাঁদের বাবা আবুল বাসার চেয়ারম্যান বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। রেজাউল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। বাছির খান উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
উপজেলাটিতে আখলাক ও তারেক এ দুই ভাইয়ের মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আখলাক হায়দার বলেন, ‘তৃণমূলের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সবাই আমার পক্ষে আছেন। নির্বাচনে জয়ী হব। দুজন সংসদ সদস্য আমার সঙ্গে আছেন।’
জয়ের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তারেক হায়দারও। তিনি বলেন, ‘টেলিফোন প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে জিতব। দলের নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা আমার পক্ষে কাজ করছেন।’