স্ত্রী আর দুই মেয়েকে বাড়িতে রেখে ঈদের নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন আবদুল মজিদ (৩০)। নামাজ শেষে হতে না হতেই ছোট ভাইয়ের ফোন পেয়ে দ্রুত বাড়ি আসেন। ততক্ষণে আশপাশের লোকজন বাড়িতে ভিড় শুরু করেছেন। ভিড় ঠেলে ঘরে ঢুকতেই দেখেন, মেঝেতে পড়ে আছে স্ত্রী শাহনাজ বেগমের (২৫) গলাকাটা রক্তাক্ত লাশ। পাশেই পড়ে ছিল হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ধারালো ছুরি।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের মতিয়ারপাড়া এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে দুপুরে লাশের প্রাথমিক সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে দেবীগঞ্জ থানা–পুলিশ।
আবদুল মজিদ ও শাহনাজ বেগম দম্পতির ছয় বছর বয়সী ও চার মাস বয়সী দুটি মেয়ে আছে। দুপুরে মতিয়ারপাড়া এলাকায় আবদুল মজিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িজুড়ে ভিড় করছেন উৎসুক লোকজন। গৃহবধূ শাহনাজ বেগমের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। টিনের বেড়া দেওয়া শোবার ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। একটি ঘরে শুইয়ে রেখে আবদুল মজিদের মাথায় পানি ঢালছেন স্বজনেরা।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় সাত বছর আগে মজিদের সঙ্গে একই ইউনিয়নের পূর্ব ভাউলাগঞ্জ এলাকার শাহনাজ বেগমের বিয়ে হয়। দাম্পত্য কলহ শুরু হলে ৮ থেকে ৯ মাস আগে বাবার বাড়ি থেকে চলে যান শাহনাজ। এরপর আবদুল মজিদের পরিবার শাহনাজকে গ্রহণ করতে না চাইলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন শাহনাজ। সেই মামলায় কিছুদিন কারাগারেও ছিলেন মজিদ। তবে মাস চারেক আগে দুই সন্তানের কথা বিবেচনা করে স্থানীয়ভাবে সমঝোতার মাধ্যমে আবারও সংসার শুরু করেন মজিদ-শাহনাজ দম্পতি। চলে যান ঢাকায়। ঈদুল ফিতর উদ্যাপন ও মামলা তুলে নেওয়ার জন্য সন্তানদের নিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন এই দম্পতি।
আবদুল মজিদের ভাই মজিবর রহমান বলেন, ‘আমি নামাজ পড়ে বাড়িতে ফেরা মাত্রই মজিদ ভাইয়ের ঘরে ওর মেয়ের চিৎকার শুনতে পাই। পরে দৌড়ে গিয়ে দেখি ভাবি (শাহনাজ) মাটিতে পড়ে আছে। আর চারদিকে রক্ত।’ পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে আবদুল মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ভালো থাকার জন্য রমজান মাস শুরুর ১০ দিন আগে ওদের নিয়ে ঢাকায় চলে যাই। আমার স্ত্রীকে প্রতিবেশী রাজু ছুরি মেরে পালিয়েছে, সেটা আমার মেয়ে নিজেই দেখেছে। আমি এই হত্যার বিচার চাই।’
এদিকে দুপুরে নিহত গৃহবধূ শাহনাজ বেগমের বাড়ির পাশে রাজুর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে রাজুর মা নুর জাহান বেগম বলেন, ‘কে খুন করেছে, তা আমি জানি না। সকালে রাজু ভাউলাগঞ্জে ঈদের নামাজ পড়বে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে। আর আসেনি।’
দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার ইফতেখারুল মোকাদ্দেম বলেন, ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক সুরতহালে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এ ছাড়া তাঁর পেটে, বাঁ ঊরুতে ও হাতে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। লাশ উদ্ধারের সময় সেখান থেকে একটি ছুরি ও এক জোড়া স্যান্ডেল জব্দ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে উল্লেখ করে ওসি বলেন, ‘প্রতিবেশী রাজু নামের এক তরুণ এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে নিহতের বড় মেয়ে ও পরিবারের সদস্যরা বলেছেন। ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি।’