বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে নিহত হযরত আলীর লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেন স্বজনেরা। শুক্রবার সকালে
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে নিহত হযরত আলীর লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেন স্বজনেরা। শুক্রবার সকালে

বাঞ্ছারামপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ডাকাতি মামলার আসামির মৃত্যুর অভিযোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় হযরত আলী নামে ডাকাতি মামলার এক আসামির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বজনদের অভিযোগ, গ্রেপ্তারের আগে তাঁকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

গতকাল শুক্রবার ভোররাতে উপজেলার ছয়ফুল্লাহকান্দি ইউনিয়নের ভেলানগর গ্রামে এ অভিযান চালানো হয়। সকালে ওই আসামি মারা যান। শুক্রবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে তাঁর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। রাত সাড়ে নয়টার দিকে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। নিহত হযরত আলী উপজেলার ছয়ফুল্লাহকান্দি ইউনিয়নের ভেলানগর গ্রামের বাড়বাড়ির বাসিন্দা।

নিহত হযরতের বোন শিমু আক্তার অভিযোগ করে বলেন, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে তাঁদের বাড়িতে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা আসেন। ভাইকে ঘরে না পেয়ে বাড়ির আশপাশে খোঁজাখুঁজি করে একপর্যায়ে তাঁকে গাছের ওপর থেকে ধরে আনেন। পরে বাড়ির উঠানে আমগাছে বেঁধে মারধর শুরু করেন। ভোর পাঁচটার দিকে হযরতকে বাড়ি থেকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যান। পরে তাঁরা তাঁর মৃত্যুর খবর পান।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. শরিফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা সকাল সাড়ে আটটার দিকে প্রথমে তাঁকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। তখন তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে তাঁর অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাঁকে আবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

এদিকে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত হযরত আলীর লাশ নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে বিক্ষোভ করেন নিহতের পরিবারের লোকজন। বিকেলে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনেরা। সন্ধ্যায় তাঁর লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।

বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোর্শেদুল আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে রূপসদী ইউনিয়নের পাহাতলি রোডে একটি ডাকাতি হয়। এ ঘটনায় মধ্যরাতে সেনাসদস্যরা তিনজনকে আটক করেন। তাঁদের মধ্যে একজনকে মধ্যরাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, হযরত আলীর বিরুদ্ধে থানায় ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে তিনটি মামলা রয়েছে। সেনাসদস্যের দেওয়া ডাকাতির সংবাদে ওই এলাকায় দায়িত্বরত এক এসআইসহ কয়েকজন রাত তিনটা থেকে চারটার দিকে ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা হযরত আলীর বাড়ি থেকে দেশি অস্ত্রসহ ডাকাতি হওয়া বিভিন্ন জিনিস উদ্ধার করে জব্দ তালিকা করেন। হযরতের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুজনকে আটক করা হয়। শুক্রবার রাতে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় ডাকাতির মামলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সেনাসদস্যরা জব্দ তালিকা করতে পারেন না। তাই তাঁরা সংবাদ দেওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জব্দ তালিকা করেছে। এ ঘটনায় পুলিশের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’