সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হলে সিটি করপোরেশনকে টাকা (ফি) দিতে হবে, কয়েক দিন ধরে নগরে এমন খবর চাউর হয়েছে।
এরপর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে আগামীকাল শনিবার বৈঠক ডেকেছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, শহীদ মিনার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে সিটি করপোরেশন। প্রায় প্রতিদিনই এখানে বিভিন্ন সংগঠন নানা অনুষ্ঠান করে থাকে। কী অনুষ্ঠান করা যাবে, কী করা যাবে না, এটা নিয়ে নীতিমালা চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ। কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এটিকে উপলক্ষ করে একটা পক্ষ অযথা বিতর্ক উসকে দিচ্ছে।
ফি নেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, জানতে চাইলে মেয়র বলেন, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। মূলত শনিবারের সভায় সবার মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, অনুষ্ঠান চলাকালে বিদ্যুৎ বিলসহ যাবতীয় খরচ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বহন করে। এটা কীভাবে সমন্বয় করা যায়, এ বিষয়ে সভায় পরামর্শ চাওয়া হবে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শহীদ মিনারে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন নানা অনুষ্ঠান করে থাকে। এ জন্য সিটি করপোরেশন থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হয়। তবে কোনো ফি দিতে হয় না। দুদিন ধরে খবর রটেছে, শহীদ মিনার চত্বর ব্যবহার করতে হলে মার্চ মাস থেকে ফি গ্রহণের মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
এ খবরে সামাজিক ফেসবুকে বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্নজন লেখালেখি করছেন। বাম গণতান্ত্রিক জোট, জাসদ, বাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সিলেটের রাজনৈতিক-সামাজিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৩০ বিশিষ্ট ব্যক্তি বিবৃতি দিয়ে ‘সিটি করপোরেশনের দূরভিসন্দিহমূলক সিদ্ধান্ত রুখে দাঁড়ানো’র আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. আরশ আলী, সিলেট জেলা সিপিবির সাবেক সভাপতি বেদানন্দ ভট্টাচার্য, সিলেট জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান আহমদ, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ ওরফে শহীদুল ইসলাম, সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, উন্নয়ন সংস্থা আইডিয়ার প্রধান নির্বাহী নজমুল হক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অম্বরীষ দত্ত প্রমুখ।
বিবৃতিতে বলা হয়, মেয়র কর্তৃক বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের ভেতরে বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি ও টাকার বিনিময়ে শহীদ মিনার বরাদ্দের বিষয়টি দুঃখজনক। এটা মেয়রের উদ্ভট চিন্তা, রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত করার স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার পরিচায়ক এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী।
এদিকে গতকাল রাত ৯টা ১৯ মিনিটে সিলেট সিটি করপোরেশনের গণসংযোগ শাখা থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে, আগামীকাল শনিবার বেলা ১১টায় সিলেটের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিচালনাবিষয়ক এক সভা হবে। এতে নগর ভবনে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।