দুই দিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পর তিন দিন ধরে রংপুরের তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জে বেড়েছে শীত ও কুয়াশার তীব্রতা। দিনের বেশির ভাগ সময় পথ-ঘাট-মাঠ কুয়াশাচ্ছন্ন থাকছে। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে দরিদ্র দিনমজুর পরিবারগুলো পড়েছে বিপাকে। হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে শীতজনিত রোগীদের ভিড়।
আজ সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শীতের তীব্রতার কারণে হাটবাজারে মানুষের উপস্থিতি কম। গ্রামের মোড়ে, বাড়ির উঠানে খড়কুটায় আগুন জ্বালিয়ে তাপ নিচ্ছেন অনেকে।
তারাগঞ্জের মাটিয়ালপাড়ার মাঠে সকালে তামাকখেতে কাজ করতে এসেছিলেন জুম্মাপাড়া গ্রামের দিনমজুর বাবুল হোসেন। ঠান্ডায় টিকতে না পেরে কিছুক্ষণ পরই বাড়ির পথে হাঁটা ধরেন বাবুল। এ সময় কথা হলে বলেন, ‘বৃষ্টির মতন কুয়াশা বাহে। হিম বাতাস, মাঘ মাসি শীতের মতন ঠান্ডা নাগেছে। মাঠোত টিকা যায়ছে না। হাত-পাও কোঁকড়া নাগেছে। এবার শীতোত বাঁচা কঠিন হয়া যাইবে।’
তারাগঞ্জের ইকরচালী বাজারে চাল কিনতে এসে শীতে কাঁপছিলেন দোলাপাড়া গ্রামের মশিয়ার রহমান। তিনি বলেন, ‘অঘ্রান মাসে এতোন শীত কোনোবার দেখো নাই। এবার বৃষ্টিও কম হইছে, পৌষ, মাঘ মাসে শীতোত যে কী হইবে, তাক আল্লাহ জানে।’
বেলা ১১টার দিকে কথা হয় হানিফ পরিবহনের চালক একরামুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এবার ঘন কুয়াশা খুব। দুপুর পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালায় গাড়ি চালাই। রংপুর ছেড়ে উত্তরে যত যাই, ততই শীত-কুয়াশা বেশি। সব গাড়িই এখন দিনের বেলাও হেডলাইট জ্বালায় চলছে।’
বামনদীঘি বাসস্ট্যান্ডে রিকশাচালক আনারুলেন বলেন, ‘ভাই, যা কামাই, সকাল থাকি দুপুর পর্যন্ত হয়। কিন্তু তিন দিন ধরি খুব কুয়াশা আর শীত। রাস্তাত দুপুর পর্যন্ত কোনো কিছু দেখা যায় না। ভাড়াও পাই নাই। সারা দিনে ৩০০ টাকাও কামাই নাই।’
তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহীন সুলতানা বলেন, দুই দিন ধরে হাসপাতালে শীতজনিত রোগী বেশি আসছেন। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত নানা সমস্যা নিয়ে আসছেন। তাঁদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
বদরগঞ্জের চিকলী নদীঘেঁষা আমরুলবাড়ি গ্রামের গৃহবধূ আরজিনা খাতুন বলেন, ‘রাইতোত নদী থাকি হিয়াল বাতাস হু হু করি ঘরোত আসি ঢোকে। ঠান্ডাত হাত-পাও বাঁকা হবার নাগছে। ছেঁড়া কাঁথা, কম্বল কোনো রকম গাওত দিয়া আছি।’ পাঠানেরহাট বাজারের ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ বলেন, ‘সকাল-সন্ধ্যা ঝরঝর করি কুয়াশা পড়োছে। সকালে তো মানুষ আইসে না। সন্ধ্যা ৬টা বাজালে হাটবাজারোত মানুষ থাকোছে না। শীত বেশি হওয়ায় বেচাবিক্রি নাই, ব্যবসাত মন্দা যাওছে।’
রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুই-এক দিনের মধ্যে তাপমাত্রা বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং কমতে পারে।