মাঠে বসে বয়ান শুনছেন মুসল্লিরা, ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে মুখর তুরাগতীর

মুসল্লিদের পদচারণে গমগম করছে ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকা। আজ শুক্রবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

মাঘের হাড়কাঁপানো শীত, সড়কের যানজট বা ঘন কুয়াশা—কোনো কিছুই থামাতে পারেনি তাবলিগ জামাতের মুসল্লিদের। তুরাগতীরে যত দূর চোখ যায়, এখন শুধু মানুষ আর মানুষ। সড়ক-মহাসড়কেও মুসল্লিদের পদচারণ। বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে মুসল্লির ঢল। ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনিতে মুখর চারপাশ।

তুরাগতীরে মুসল্লিদের এ ঢল বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বকে কেন্দ্র করে। আজ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় পর্ব বা মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমা। সারা দেশ থেকে আগত মুসল্লিদের পদচারণে গমগম করছে ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকা। আজ ফজরের নামাজের পর পাকিস্তানের মাওলানা ওসমানের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ইজতেমা শুরু হয়। বয়ান বাংলায় তর্জমা করেন মাওলানা জিয়া ইবনে কাশেম।

তাবলিগ জামাতের বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলাদাভাবে। আজ থেকে শুরু হওয়া মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের ইজতেমা চলবে আগামী রোববার পর্যন্ত। এর আগে প্রথম পর্বে ১৩ থেকে ১৫ জানুয়ারি মাওলানা সাদ কান্ধলভির বিরোধী হিসেবে পরিচিত মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা ইজতেমা পালন করেন।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইজতেমা মাঠে বাড়ছে মুসল্লিদের ঢল

দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমাকে ঘিরে গত বুধবার সকাল থেকেই মুসল্লিরা আসতে থাকেন। সবচেয়ে বেশি মুসল্লি আসেন গতকাল বৃহস্পতিবার। বিকেলের মধ্যে ভরে যায় ইজতেমা মাঠ। এর মধ্যে আজ ইজতেমার জামাতের সঙ্গে জুমা নামাজে যোগ দিতে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে মুসল্লিরা আসছেন দলে দলে।
সকাল ৯টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, মাঘের হাড়কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে মুসল্লিরা অবস্থান করেছেন মাঠের ভেতর। সবার পরনে গরম কাপড়। মাইকে ভেসে আসা বয়ান শুনছেন। মাঝেমধ্যেই ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিচ্ছেন। পাশাপাশি মাঠসংলগ্ন সড়কগুলোতেও মুসল্লিদের হাঁটাচলা। তাঁদের কারও মাথায়, কারও কাঁধে, কারওবা হাতে একাধিক ব্যাগ ও গাট্টি–বোঁচকা। তাঁরা আজও আসছিলেন ইজতেমা মাঠের দিকে।

কথা হয় বরিশালের রাঙ্গাবালী থেকে আসা ১৮ সদস্যের একটি দলের সঙ্গে। দলের সদস্যরা জানান, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে তাঁরা প্রতিবছরই তুরাগপাড়ে এই ইজতেমায় আসেন। এবার প্রথম পর্বের ইজতেমায় আসতে পারেননি, তাই যোগ দিয়েছেন এই ইজতেমায়। রফিক নামের এক সাথি বলেন, এবার প্রচুর শীত। সবারই কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু তাতে কেউ কিছু মনে করছে না। আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে বের হয়ে সবাই আনন্দিত।

সাদ অনুসারীদের ইজতেমার মিডিয়ার সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা মো. সায়েম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মুসল্লি বা স্থানীয়দের কষ্টের কথা ভেবে প্রতি জেলায় নির্দেশনা দিয়েছিলাম যেন সীমিতসংখ্যক সাথি আসেন। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, প্রতি জেলা থেকেই তার চেয়ে অনেক বেশি লোক এসেছে। আমাদের মাঠ এখন কানায় কানায় ভর্তি। আমরা সবাই মিলে একটা সুন্দর ইজতেমা করব।’

আজকে ফজরের পর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে মূল ইজতেমা শুরু হলেও মুসল্লি বেশি থাকার কারণে গতকাল বাদ আসর থেকেই বয়ান শুরু হয়। আগামী রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা।

গতকাল গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা প্রথম পর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মুসল্লিদের নিরাপত্তায় এবার আরও তৎপর অবস্থানে আছি। এবারও কাজ করবেন প্রায় ১০ হাজার পুলিশ সদস্য।’
গাজীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পুরো ইজতেমায় কাজ করছেন ২০ থেকে ২৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ব্যবহারের জন্য ৩১টি ভবনে রয়েছে ৮ হাজার ৮৮৪টি শৌচাগার ও ৫৪৪টি গোসলখানা। ১৬টি গভীর নলকূপ দিয়ে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে মুসল্লিদের। চারটি ১১ কিলোভোল্ট ফিডারের সাহায্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। চারটি শক্তিশালী জেনারেটর প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি মুসল্লিদের পারাপারের জন্য রয়েছে সেনাবাহিনীর পাঁচটি ভাসমান সেতু ও মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১০টি বিশেষ ট্রেন চালু থাকবে।

জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা ইজতেমায় সার্বক্ষণিক নজরদারি জোরদার করেছি। সব সময় আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছেন।’