নারায়ণগঞ্জে ত্বকী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামিকে আবার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ আদালতের সামনে
নারায়ণগঞ্জে ত্বকী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামিকে আবার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ আদালতের সামনে

তক্বী হত্যা মামলা

আজমেরী ওসমানের আরেক সহযোগীর আদালতে জবানবন্দি, অন্য দুজন রিমান্ডে

নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যায় আজমেরী ওসমানের আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী কাজল হাওলাদার (৩৬) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হায়দার আলীর আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এ নিয়ে ত্বকী হত্যায় আজমেরী ওসমানের তিন সহযোগী আদালতে জবানবন্দি দিলেন।

এর আগে দুপুরে একই আদালতে ৬ দিনের রিমান্ড শেষে দুই আসামি শাফায়েত হোসেন ও মামুন মিয়াকে হাজির করে আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে তাঁদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আজমেরী ওসমান জাতীয় পার্টির নেতা ও নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নাসিম ওসমানের ছেলে এবং আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের ভাতিজা। আসামিরা আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র‍্যাব-১১-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহাবুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দুই আসামিকে আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। অপর আসামি কাজল হাওলাদার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি গ্রহণের পর আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।

জবানবন্দির বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে র‍্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে তাঁর টর্চার সেল শহরের আল্লামা ইকবাল রোডের উইনার ফ্যাশনে ত্বকীকে হত্যা করা হয়। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কাজল হাওলাদার স্বীকার করেছেন, উইনার ফ্যাশনে ত্বকীকে হত্যা করা হয়। তিনি নিজে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত না থাকলেও তখন কম্পাউন্ডে উপস্থিত ছিলেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

এর আগে হত্যাকাণ্ডের পরপরই ত্বকী হত্যা মামলায় আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত (ভ্রমর) ও ইউসুফ হোসেন (লিটন) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তখন ত্বকী হত্যা মামলায় ৫ আসামি সুলতান শওকত, ইউসুফ হোসেন, সালেহ আহমেদ, রিফাত বিন ওসমান ও তায়েব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছিল র‍্যাব। বর্তমানে আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে পলাতক আছেন।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ থেকে দীর্ঘ সাড়ে ১১ বছর ধরে ত্বকী হত্যার বিচার ও ঘাতকদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখে ধারাবাহিকভাবে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। প্রতিবছর সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা এবং গোলটেবিল বৈঠক ও আলোচনা সভার আয়োজন করে আসছে।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ত্বকী হত্যা মামলার বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মামলায় আজমেরী ওসমানের সহযোগী শাফায়েত হোসেন, মামুন মিয়া, কাজল হাওলাদার ও আজমেরী ওসমানের গাড়িচালক জামশেদকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে পৃথক অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-১১। তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সংস্থাটি। দীর্ঘদিন ত্বকীর হত্যাকারী আজমেরী ওসমান প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে যায়।

র‍্যাব-১১-এর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা প্রথম আলোকে বলেন, আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কাজল হাওলাদার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে কী তথ্য, সেটা তিনি জানাননি।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুদিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।

৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র‍্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাঁদের টর্চার সেলে আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেন। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু সেই অভিযোগপত্র আজও দেওয়া হয়নি।