চারদিন পর জানা গেল পোড়া লাশটি বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নইমুল হোসেনের

গাজী নইমুল হোসেন (৫৫)
ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বাড়িতে পুড়ে যাওয়া তিনটি লাশের মধ্যে দুজনের পরিচয় গত মঙ্গলবার শনাক্ত করেছিলেন তাঁদের স্বজনেরা। এরপর একটি লাশ শনাক্ত না হওয়ায় পড়ে ছিল বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের মর্গে। শুক্রবার লাশটির পরিচয় শনাক্ত হয়েছে।

লাশটি বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর গাজী নইমুল হোসেন ওরফে লিটুর (৫৫)। নইমুল হোসেন ওই ওয়ার্ডের চারবারের কাউন্সিলর ও বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতার বাবা অধ্যক্ষ হোসেন আলী ছিলেন একজন ভাষাসৈনিক। তাঁর লাশ শনাক্ত হওয়ার পর নগরের নতুনবাজার এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

সোমবার বিকেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বরিশালে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে উল্লাস শুরু করেন। তখন আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বিকেলে নগরের কালীবাড়ি রোডে সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর পৈতৃক ওই বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন দেন বিক্ষোভকারীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার বেলা তিনটার দিকে কয়েক শ লোক ওই বাড়ির চারপাশে ঘিরে হামলা চালান। এ সময় বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তখন সাদিক আবদুল্লাহ ওই বাড়িতে অবস্থান করছিলেন বলেই অনেকে দাবি করেন। তবে সাদিক আবদুল্লাহসহ অনুসারীরা বাড়ি থেকে বের হয়ে যান।

আগুনে দোতলা বাড়িটির বেশির ভাগ অংশ পুড়ে গেছে। আগুন নিভে যাওয়ার পর বাড়ির দোতলার একটি কক্ষে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তিনজনের মরদেহ দেখতে পান স্থানীয় লোকজন। পরে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই তিনজনের লাশ উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। আগুনে পুড়ে তিনজনের মুখ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় প্রথমে লাশগুলো শনাক্ত করা যায়নি। এরপর মঙ্গলবার দুজনের পরিচয় শনাক্ত করেন তাঁদের স্বজনেরা। তাঁরা হলেন নগরের নাজির মহল্লা এলাকার কাঞ্চন ফরাজির ছেলে নুর ইসলাম (৪৫) এবং বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরামদ্দি এলাকার মজিবুর রহমান জমাদ্দারের ছেলে যুবলীগ নেতা মঈন জমাদ্দার (৪৫)।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, চার দিন ধরে একটি পোড়া লাশের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় তা মর্গে পড়ে ছিল। শুক্রবার সকালে মৃত ব্যক্তির প্যান্টের পকেটে একটি মুঠোফোন পাওয়া যায়। মুঠোফোনটি বন্ধ ছিল। সেটি চালু করলে এর স্ক্রিনে নইমুল হোসেনের ছেলের ছবি ভেসে ওঠে। এরপর তাঁর পরিবারকে খবর জানালে দুপুরে কলেজের মর্গে ছুটে যান স্বজনেরা। পরে তাঁরা হাতের আংটি, হাতঘড়ি, মুঠোফোন এবং পরনের প্যান্ট দেখে নিশ্চিত হন, লাশটি নইমুল হোসেনের।

নইমুলের স্ত্রী নাজমুন নাহার জানান, সোমবার থেকে নইমুল হোসেনের সঙ্গে তাঁদের যোগযোগ ছিল না। ফোনও বন্ধ ছিল। তাঁদের ধারণা ছিল, দেশের টালমাটাল পরিস্থিতিতে হয়তো তিনি কোথাও নিরাপদে আছেন। কিন্তু শুক্রবার খবর পান, মর্গে থাকা একটি লাশের পকেটে মুঠোফোন পাওয়া গেছে। এরপর মর্গে গিয়ে তাঁরা নিশ্চিত হন, এটি নইমুলের লাশ।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, নইমুল হোসেন রাজনীতির পাশাপাশি বরিশালের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সক্রিয় ছিলেন। খেলাঘরের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঘটনার চার দিন পর তৃতীয় লাশটির পরিচয় শনাক্ত হলো। এখন ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।