এক নারীর কাছে রাজশাহীর চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলমের সাত লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার ঘটনায় তদন্তের জন্য আরও সময় পেয়েছে কমিটি। গতকাল রোববার আগের পাঁচ কার্য দিবস শেষে প্রতিবেদন জমা হওয়ার কথা ছিল। তবে অধিকতর তদন্তের জন্য গতকাল তদন্ত কমিটি সময় চেয়ে আবেদন করে। তদন্তের জন্য আরও পাঁচ কার্য দিবসের সময় দিয়েছেন পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান।
রাজশাহীর পুলিশ সুপার আজ সোমবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটি আরও পাঁচ কার্যদিবস চেয়েছে। তারা এ ঘটনায় প্রায় ৩৭-৩৮ জনের সাক্ষাৎকার নেবে। গতকালের একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় বাড়ানো হয়েছে।
এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে ওসি মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে রাজশাহীর পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন সাহারা খাতুন (২৮) নামের এক নারী। এর সঙ্গে ঘুষ চাওয়ার ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের কথোপকথনের একটি রেকর্ডও সংযুক্ত করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকে অডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ওসি মাহবুবুলকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। যদিও ফাঁস হওয়া অডিওর বক্তব্য ‘এডিটেড’ (সম্পাদনা করা) বলে দাবি করেছেন মাহবুবুল আলম।
এ ঘটনায় পরদিন গতকাল তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে দেন পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির গতকাল প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে অভিযোগকারী সাহারা খাতুন, ওসি মাহবুবুল, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রুবেলসহ বেশ কয়েকজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ সেপ্টেম্বর সাহারা খাতুন তদন্ত কমিটিকে পুরো ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের একটি অডিও রেকর্ড জমা দেন।
ফাঁস হওয়া ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের অডিওতে ওসি বলেন, ‘এক মন্ত্রী বাদে কারও কথা শুনতে এখানে আসি নাই।...এই লোকটা রাষ্ট্র। রাষ্ট্রকে সম্মান করি। মন্ত্রী মানেই রাষ্ট্র। আর মন্ত্রী অত্যন্ত ভদ্রলোক মানুষ। আমাকে নিয়ে আসছে সে। আমাকে গাইবান্ধা থেকে নিয়া আসছে। তাহলে আমি যদি খারাপ হই, তাহলে কষ্ট পাবে।’ এই কথার মধ্যেই চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম বলতে থাকেন, ‘আপনাকে নিয়া আসছে একেবারে নির্বাচনটা পার করে দিবেন...।’ জবাবে ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘তা তোমাদের রিজিকে আছে কি না, আমি জানি না। এখন এই যে নির্বাচন কমিশনার নাটক শুরু করেছে।’ ওই অডিওতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তাকে জড়িয়েও কথা বলেছেন ওসি।
ফাঁস হওয়া অডিওর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রথম আলোকে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করেন। তিনি মুঠোফোনে এক খুদে বার্তায় বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকার কোনো নিয়োগে আমি সুপারিশ করি না। যত দূর মনে পড়ে, তিনি যোগদান করেছেন অনেক দিন আগেই এবং অসুস্থতার কারণে চিকিৎসার জন্য কয়েক দফা কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত ছিলেন বলে শুনেছি।’
লিখিত অভিযোগে সাহারা খাতুন উল্লেখ করেছেন, তাঁর স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ও র্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করেন। সাহারা খাতুনের স্বামীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চারঘাট এলাকায় অনেক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ও পুলিশ। এতে তাঁর স্বামী ও পরিবারের ওপর চারঘাটের মাদক ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হন। তাঁর স্বামীকে মাদক ও অস্ত্র দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্বামীকে গ্রেপ্তারের পর মাদক ব্যবসায়ীরা তাঁদের ওপর অত্যাচার শুরু করেন। ১২ সেপ্টেম্বর ওসিকে ফোন দিয়ে সাহারা খাতুন তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। ওসি তাঁকে পরদিন থানায় আসতে বলেন। থানায় গেলে ওসি পাশেই তাঁর কোয়ার্টারে ডেকে নেন তাঁকে। এ সময় সাহারা খাতুনের ছেলেও সঙ্গে ছিল। ওসি তাঁর সঙ্গে যেসব কথা বলেন, তা তিনি কৌশলে রেকর্ড করে রাখেন।
তদন্ত কমিটির সদস্য ও রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. রফিকুল আলম বলেন, তাঁরা তদন্ত শেষ করতে পারেননি। তাই সময় বাড়ানোর আবেদন করা হলে সময় বাড়ানো হয়।