কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির

উখিয়ায় আশ্রয়শিবিরে গোলাগুলিতে রোহিঙ্গা তরুণ নিহত, গুলিবিদ্ধ ৫

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে এক রোহিঙ্গা তরুণ নিহত হয়েছেন। এতে আরও অন্তত পাঁচজন রোহিঙ্গা আহত হয়েছেন। আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক চোরাচালানের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে এ সংঘর্ষ হয়।

আজ বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের হাকিমপাড়া ও জামতলী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৫) মাঝামাঝি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুলিতে নিহত তরুণের নাম আবদুর রহমান (১৯)। তিনি হাকিমপাড়া আশ্রয়শিবিরের ই-২ ব্লকের রোহিঙ্গা মোহাম্মদ আবদুল্লাহর ছেলে।

আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক ও অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (এডিআইজি) মো. আমির জাফর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। আজ বিকেলে উখিয়ার হাকিমপাড়া ও জামতলী আশ্রয়শিবিরের মাঝামাঝি এলাকায় তারা সংঘর্ষে জড়ায়।

স্থানীয় রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে আমির জাফর প্রথম আলোকে বলেন, উভয় পক্ষ ২০ থেকে ২৫ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে ছয়জন রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হন। খবর পেয়ে এপিবিএনের একটি দল ঘটনাস্থলে গেলে সন্ত্রাসীরা পাহাড়ে আত্মগোপন করে। আহত রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করে জামতলী আশ্রয়শিবিরের এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক একজনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে গুলিবিদ্ধ কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের এমএসএফ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গারা হলেন হাকিমপাড়া আশ্রয়শিবিরের ই-২ ব্লকের সিদ্দিক আহমেদের ছেলে নুর মোহাম্মদ (৩২), সুলতান আহমেদের ছেলে মোহাম্মদ জোবায়ের (৩৭), রশিদ উল্লাহর ছেলে মো. শাফায়েত ও দিল মোহাম্মদের ছেলে নুর আলম এবং জামতলী আশ্রয়শিবিরের লাল মিয়ার স্ত্রী নেছারা বেগম (৫৫)। নিহত আবদুর রহমানের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে উখিয়া থানা-পুলিশ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আশ্রয়শিবিরের এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তার, মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজির ঘটনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আরসার সঙ্গে আরএসওর বিরোধ চলছে। সন্ধ্যার পর সশস্ত্র গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা আশ্রয়শিবিরের ভেতরে এসে মুক্তিপণের জন্য রোহিঙ্গাদের অপহরণ ও মাদক ব্যবসায় জড়িত ব্যক্তিদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এতে সাধারণ রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

পুলিশ জানায়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর ভোরে উখিয়ার জামতলী ও কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে আরসা ও আরএসওর মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে দুজন রোহিঙ্গা নিহত হন। তাঁরা হলেন জামতলী আশ্রয়শিবিরের এ-ব্লকের নুর বশর (৫৫) ও কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের সি-১ ব্লকের কবির আহমেদ (২৭)।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতারা জানান, ১৬ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত দুইটার দিকে আরসার অন্তত ৪০ জন অস্ত্রধারী ঘর থেকে নুর বশরকে তুলে নিয়ে আশ্রয়শিবিরের এ-ব্লকের ইটের রাস্তা এলাকায় গুলিতে হত্যা করে। বশর আরএসও সদস্য। প্রতিশোধ নিতে আরএসও সন্ত্রাসীরা কুতুপালং আশ্রয়শিবির থেকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে হত্যা করে আরসার সদস্য কবির আহমেদকে।

এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর ভোরে উখিয়ার তানজিমারঘোনা (ক্যাম্প-২০) আশ্রয়শিবিরের এম-২৫ ব্লকের মারকাজ মসজিদ-সংলগ্ন এলাকায় আরএসও ও আরসার মধ্যে সংঘর্ষে আরসার দুজন ক্যাম্প কমান্ডার খুন হন। তাঁরা হলেন উখিয়ার ২০ নম্বর আশ্রয়শিবিরের এম-২৫ ব্লকের আবুল কালামের ছেলে ইমাম হোসেন (৩৭) ও মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৪) বি-৬ ব্লকের গনি মিয়ার ছেলে রহমত উল্লাহ (২৫)।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের ২ অক্টোবর পর্যন্ত ৯ মাসে আশ্রয়শিবিরগুলোতে ৬০টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৬৯ জন রোহিঙ্গা খুন হন। আরসার সঙ্গে আরএসও ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেনের বাহিনীর মধ্যে অধিকাংশ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আরসার ২৪ ও আরএসওর ১১ সদস্য খুন হয়েছেন।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। এ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।