মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি ও টানা বৃষ্টিতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতি। ইতিমধ্যে সরকারিভাবে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করেছে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা দিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা পাঠিয়ে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, বন্যায় কমলগঞ্জের ১৯৬টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ১৭০ টন চাল দেওয়া হয়েছে। এখন ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য বরাদ্দ এলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি মেরামত করে দেওয়া হবে।
বন্যার পানির কারণে উপজেলার প্রায় ৮০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাঈফুল আজম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৮০ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে অনেক জায়গায় ১০–১৫ ফুট রাস্তা পুরোপুরিভাবে ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাঁরা রাস্তাগুলোর তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছেন। বরাদ্দ পেলে দ্রুত সেগুলো সংস্কার করা হবে। কিছু জায়গার কাজ জরুরি হিসেবে চিহ্নিত করে দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকেরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় প্রথম আলোকে বলেন, বন্যায় উপজেলার ১২ হাজার হেক্টর আমন ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। আংশিক নষ্ট হয়েছে আরও ১২ হাজার ৮০ হেক্টর জমির ধান। এ ছাড়া ১০০ হেক্টর আউশ ও ৭৫ হেক্টর খেতের সবজি নষ্ট হয়েছে। উপজেলা কৃষি কার্যালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ৬০০ কৃষকের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাতের রোপা আমন ধানের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত জমি পরিদর্শন করে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে বন্যার কারণে প্রায় আড়াই শ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সহিদুর রহমান সিদ্দিকী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্যার পানি পুকুরগুলোর সঙ্গে মিশে যাওয়ায় সব মাছ ভেসে গেছে। এতে পুকুরের মালিকদের প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তালিকা দিয়েছি। বরাদ্দ পেলে চাষিদের মাছের পোনা ও অন্যান্য সহযোগিতা করা হবে।’
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, বন্যার পানি নেমে গেছে। বন্যার্ত ব্যক্তিদের সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করেছেন। তালিকা অনুযায়ী সরকারিভাবে কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন খাতে সরকারের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।