সড়কের পাশের গাছগুলোতে লাল রং দিয়ে চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। তাতে বসানো হয়েছে ক্রমিক নম্বর। কিছুদিনের মধ্যেই তা কাটা হবে। লাল রঙের ওই চিহ্ন ও নম্বরগুলোকে স্থানীয় লোকজন বলছেন মৃত্যু পরোয়ানার চিহ্ন। এটি শরীয়তপুর সদর উপজেলার বালার বাজার-ঘোড়াঘাট সড়কের দৃশ্য। ওই সড়কের একাংশের গাছ ইতিমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে।
শুধু বালার বাজার-ঘোড়াঘাট সড়কই নয়, এমন চিত্র শরীয়তপুরের ছয়টি সড়কের। সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন সড়কে রোপণ করা ১ হাজার ৭০০ গাছ কেটে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। গত ৬ মাসে ১ হাজার ৩০০ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কেটে ফেলার জন্য আরও ৪০০ গাছকে চিহ্নিত করে লাল রং দিয়ে ক্রমিক নম্বর লাগানো হয়েছে।
শরীয়তপুর সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের ১০০ কিলোমিটার সড়কে বিভিন্ন সময়ে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের গাছ রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি সড়কের ১৯ কিলোমিটার অংশের ১ হাজার ৭০০ গাছ কেটে বিক্রির জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয় শরীয়তপুর বন বিভাগের কার্যালয় থেকে। প্রস্তাব পাওয়ার পর গত নভেম্বরে দরপত্র আহ্বান করে ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়। ৯৩টি লটে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ঠিকাদার বন বিভাগের নির্ধারণ করা দামে গাছগুলো ক্রয় করেছে। গত ডিসেম্বর মাস থেকে সড়কের গাছগুলো কাটা শুরু হয়। ইতিমধ্যে ৬২টি লটের ১ হাজার ৩০০ গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। সেই গাছের দাম বাবদ বন বিভাগ পেয়েছে ৩৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। আর ৩১টি লটের ৪০০ গাছ কেটে নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
গাছগুলো কেটে নেওয়া হয়েছে এবং রং লাগিয়ে রাখা হয়েছে সদরের বালার বাজার-ঘোড়াঘাট সড়ক, আটং ডিসি সড়ক থেকে পমলাকার্তা সড়ক, ভেদরগঞ্জের স্বনির্ভর থেকে ডামুড্যার কুতুবপুর সড়ক, ভেদরগঞ্জের মোল্ল্যার বাজার-বাংলা বাজার সড়ক, চরপায়াতলী-হাকিম আলী ব্রিজ সড়ক ও গোসাইরহাটের দপ্তরি বাড়ি-মলংচরা সড়কের গাছে।
সদর উপজেলার বালার বাজার-ঘোড়াঘাট পাকা সড়কটি এলজিইডির। সড়কের দুই পাশে ফসলি জমি। সড়কের দুই পাশেই ১৫-১৬ বছর আগে রেইনট্রি, আকাশমণি, বকাইন, টিকরাশি, কড়ই, মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করে বন বিভাগ। গাছগুলো বড় হলে স্থানীয় কৃষক ও পথচারীরা ওই গাছের নিচে বিশ্রাম নিতেন। সড়কটির ৭০ শতাংশ গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। বাকি ৩০ শতাংশ গাছ লাল রং দিয়ে চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছে।
বালার বাজার এলাকার বাসিন্দা লিয়াকত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৫-১৬ বছর আগে এলজিইডি আমাদের এ সড়ক সংস্কার করে। তখন পুরোনো গাছ কেটে ফেলা হয়। সড়কটির সংস্কারকাজ শেষে বন বিভাগ সড়কের পাশে গাছ রোপণ করে। ওই গাছগুলো আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। গাছগুলো থাকায় সড়কটির পরিবেশ ভালো ছিল। আমরা ফসলি জমিতে কাজ করার সময় গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতাম। সেই গাছগুলো কেটে নেওয়া হয়েছে।’
সদর উপজেলার আমিন বাজার এলাকায় সড়কের পাশে থাকা কিছু গাছে লাল রং দিয়ে চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। শনিবার বিকেলে ওই গাছগুলোর নিচে দাঁড়িয়ে কয়েক শ্রমিক আক্ষেপ করতে থাকেন। তাঁদের একজন রাজিব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সড়কটি আগে ছায়াঘেরা ছিল। সব স্থানে রোদ্দুর থাকলেও এ এলাকায় ছায়ার কারণে তাপপ্রবাহ কম ছিল। কাজের ফাঁকে ফাঁকে মানুষেরা বিশ্রাম নিতেন। এখন আর সেই পরিবেশ নেই। অধিকাংশ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বাকি গাছগুলো মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
শরীয়তপুর বন বিভাগের সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন বলেন, বিভিন্ন সড়কের পাশে বন বিভাগ নানা প্রজাতির গাছ রোপণ করেছে। সামাজিক বনায়নের আওতায় জমির মালিক, উপকারভোগী (রক্ষণাবেক্ষণকারী) ও বন বিভাগের মধ্যে ১০ বছরের চুক্তিতে ওই গাছগুলো লাগানো হয়েছে। শরীয়তপুরের অধিকাংশ সড়কের ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই গাছ কেটে নতুন করে সেই স্থানে পুনরায় গাছ লাগানো হবে। এ কারণে ১ হাজার ৩০০ গাছ কাটা হয়েছে। আর ৪০০ গাছ কাটার জন্য রং দিয়ে চিহ্ন দেওয়া হয়েছে।