প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের মানাউড়া গ্রামের বন্যার্তদের ত্রাণসহায়তা দেওয়া হয়। ত্রাণ পেয়ে খুশি গ্রামের ছায়েবান বেগম ও ফুলবানু। বুধবার দুপুরে। ছবি : আনিস মাহমুদ
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের মানাউড়া গ্রামের বন্যার্তদের ত্রাণসহায়তা দেওয়া হয়। ত্রাণ পেয়ে খুশি গ্রামের ছায়েবান বেগম ও ফুলবানু। বুধবার দুপুরে। ছবি : আনিস মাহমুদ

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগ

গোয়াইনঘাটে ত্রাণ পেয়ে বন্যার্তদের মুখে হাসি

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৫০ বন্যার্ত পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুর ১২টায় উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের মানাউরা কান্দিবাড়ী গ্রামে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে এ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে ছিল ১০ কেজি চাল, ১ লিটার সয়াবিন তেল, ১ কেজি ডাল ও ১ কেজি লবণ।

হাতে বাওয়া ছোট নৌকা নিয়ে ত্রাণ নিতে আসেন ফুলবানু বেগম (৬০)। ত্রাণ পেয়ে খুশি স্বামীহারা ফুলবানু বলেন, ‘সায়–সাহায্য লইয়া কেউ আইরানা। অউ পইলা পাইয়া খুব ভালা লাগছে। আল্লাহ তোমরার ভালা করুক। আমার কেউ নাই। মেয়েডারে বিয়ে দিয়া আমি এখন খুউব কষ্ট খইরা দিন কাটের। কেউ কুনতা দিলে চলি। আফালে (বন্যার পানি ঢেউ) আমার ঘরের বেড়া ভাইঙা লইয়া গেছে গা। বৃষ্টি আইলে ঘরো থাকন যার না। পেট ভইরাই কুনতা খাই না অত দিন। ত্রাণ পাইয়া অনেক খুশি অইছি।’

ত্রাণ পেয়ে খুশি সত্তরোর্ধ্ব রসুন আলী ত্রাণের প্যাকেট পেয়ে তা বুকে জড়িয়ে নেন। এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ‘ঈদের আগের দিন ঘরে হাঁটুপানি উঠছে, ইদিন আশ্রয়কেন্দ্রত গিয়া উঠছি। এর পর থেকে ভাত-তরকারি দেখরাম না। গত পরশু দিন বাড়িত আওয়ার আগে চিড়া দিছল, ইতা খাইয়াই আছলাম। গত পরশু দিন ঘরো আইছি। কিন্তু কুনতাও নাই ঘরো। অউ তোমরা ত্রাণ দিছো, এখন খাইতাম পারমু। কত খুশি যে লাগছেরে বাবা।’

ত্রাণ বিতরণ করা হয় চারদিকে পানিবন্দী স্থানীয় একটি মক্তবের মাঠে। পুরো গ্রাম এখনো পানিবন্দী। প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা হাতে বাওয়া ছোট নৌকায় ত্রাণ নিয়ে পৌঁছান গন্তব্যস্থলে। এর আগেই সেখানে ত্রাণ নিতে উপস্থিত হন বন্যার্ত মানুষেরা। গ্রামটিতে প্রথম আলো ট্রাস্ট থেকেই প্রথম ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ নিতে আসা সবাই পানিবন্দী থাকায় হাতে বাওয়া ছোট নৌকা নিয়ে আসেন এবং ত্রাণ নিয়ে একইভাবে বাড়ি ফিরে যান বন্যার্ত মানুষেরা। পানিবন্দী থাকায় ত্রাণ নিতে কেউ কেউ তাঁদের ছোট সন্তান ও নাতি–নাতনিদের পাঠান।

ত্রাণসামগ্রী বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের নির্বাহী শামীম আহমেদ, গ্রামের সমাজকর্মী কুতুব উদ্দিন, প্রথম আলো বন্ধুসভা সিলেটের সভাপতি অন্তর শ্যাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেব দুলাল রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গায়ত্রী বর্মন, দপ্তর সম্পাদক সমরজিৎ হালদার, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম, সদস্য সাজন বিশ্বাস, স্থানীয় বাসিন্দা মঈন উদ্দিন, ফখরুল ইসলাম, আলী হোসেন প্রমুখ।

গ্রামের সমাজকর্মী কুতুব উদ্দিন বলেন, ৫০টির মধ্যে ৩০টি পরিবারেই ছোট ছেলেমেয়েরা বাবাহারা ও স্ত্রীরা স্বামীহারা। পরিবারগুলো অসহায় থাকায় অনেক পরিবারে প্রতি বেলায় ভাত জুটে না। প্রতিবছরই বন্যা হয়ে মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে যায়। এতে মানুষের উন্নতি করার সুযোগ নেই। এই বন্যায় গ্রামে কেউ ত্রাণ নিয়ে আসেনি। প্রথম আলোই প্রথম ত্রাণ নিয়ে এসেছে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে প্রথম আলো অসহায়দের পাশে থাকে। সত্য কথা প্রকাশের পাশাপাশি পত্রিকার এই কার্যক্রমের আরও সফলতা আসুক। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শিমুলতলা গুচ্ছগ্রামে ১৫০ বন্যার্ত পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে প্রথম আলো ট্রাস্ট।

উল্লেখ্য, প্রথম আলো ট্রাস্টের এ আয়োজনে সহযোগিতা করছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স পিএলসি। বন্যার্ত মানুষের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টে পাঁচ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এই অনুদানের টাকায় বন্যার্ত মানুষের কাছে খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।