নরসিংদীর রায়পুরায় স্কুল থেকে ফেরার পথে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আজ সোমবার সকালে রায়পুরা থানায় ওই ছাত্রীর বাবা লিখিত অভিযোগ করেছেন। গতকাল রোববার বিকেলে রায়পুরার উত্তর বাখরনগর ইউনিয়ন থেকে ওই ছাত্রীকে একটি প্রাইভেট কারে তুলে নেওয়া হয় বলে লিখিত অভিযোগে দাবি করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে জীবন মিয়া (১৯) ও অজ্ঞাতনামা চার তরুণকে অপহরণের ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত জীবন মিয়া রায়পুরার অলিপুরা ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরনগর গ্রামের বাসিন্দা।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওই ছাত্রীকে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতেন জীবন মিয়া। এই বিষয়ে ওই ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে জীবন মিয়ার পরিবারের কাছে একাধিকবার অভিযোগ জানানো হয়, তবে বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি। উল্টো বাড়িতে অভিযোগ করায় জীবন মিয়া ছাত্রীকে অপহরণের হুমকি দিয়েছিলেন।
ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তাঁর মেয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরছিল। ফেরার পথে বাড়িসংলগ্ন সড়কে একটি সাদা প্রাইভেট কার এসে থামে। পরে ওই প্রাইভেট কার থেকে জীবন ও তাঁর চার বন্ধু নেমে তাঁর মেয়েকে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে নেন। এরপর থেকে পরিবারের সদস্যরা মেয়ের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না। তিনি দ্রুত তাঁর মেয়ের খোঁজ জানতে চান। এ জন্য তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রীর কয়েকজন সহপাঠী বলে, গতকাল রোববার বিকেল চারটার পর স্কুল শেষে তারা কয়েকজন সহপাঠী একসঙ্গে বাড়ি ফিরছিল। ফেরার পথে ৪টা ২০ মিনিটের দিকে একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কার এসে তাদের পথ রোধ করে। এ সময় ওই প্রাইভেট কার থেকে জীবন মিয়া নেমে আসেন। পরে ওই ছাত্রীকে হাত ধরে টানাটানি করে জোরপূর্বক গাড়িতে উঠানো হয়। ওই গাড়িতে জীবন মিয়ার আরও চারজন বন্ধু ছিলেন। এরপরই ওই ছাত্রীকে নিয়ে গাড়িটি মহাসড়কের দিকে চলে যায়। ওই ছাত্রীকে তুলে নেওয়ার সময় তারা চিৎকার করেছিল। কিন্তু ওই সময় আশপাশে কেউ ছিল না। পরে তারা দুই দলে ভাগ হয়ে বিদ্যালয়ে ও ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি জানায়।
এই বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত জীবন মিয়ার ব্যবহৃত মুঠোফোনে কয়েক দফা কল করেন এই প্রতিবেদক। কিন্তু প্রতিবারই তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। জীবন মিয়ার বাড়িতে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘর তালাবদ্ধ রেখে জীবন মিয়ার পরিবারের সদস্যরা অন্য কোথাও গেছেন বলে প্রতিবেশীরা জানান। জীবনের মায়ের মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে উত্তর বাখরনগর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল হক বলেন, ‘মেয়েটি পড়ালেখায় ভালো হওয়ায় এলাকায় তাকে সবাই খুব আদর করে। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে জীবন মিয়া তাকে উত্ত্যক্ত করত, বিষয়টি আমরা জানতাম। এ নিয়ে কয়েক দফা জীবন মিয়ার বাড়িতে বিচার দেওয়া হলে জীবন মিয়া অপহরণের হুমকিও দিয়েছিলেন। কিন্তু আসলেই এমন ঘটনা ঘটে যাবে, তা বুঝতে পারিনি। এর কঠিন বিচার হওয়া উচিত।’
ওই ছাত্রীর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ওই ছাত্রী পড়াশোনায় মনযোগী ছিল। তাকে অপহরণের পর ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো উদ্ধার না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকেরা আতঙ্কে আছে। প্রশাসন ও পুলিশের কাছে একটাই দাবি, দ্রুত অক্ষত অবস্থায় ওই ছাত্রীতে উদ্ধার করা হোক।
জানতে চাইলে রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অভিযুক্ত জীবন মিয়ার এক বন্ধুকে থানায় আনা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত ওই ছাত্রীকে আমরা উদ্ধার করতে পারব।’