গরু ও দুধ বিক্রি করে সংসারে সচ্ছলতা এসেছে বিমল প্রামাণিকের

এই পরিশ্রমী উদ্যোক্তার নাম বিমল প্রামাণিক। বাড়ি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার ছয়খাদা গ্রামে। তিনি দেশি গরুর খামার গড়ে তুলেছেন।

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের বিমল প্রামাণিক দেশি জাতের গরুর খামার করেছেন

একসময় তাঁদের সংসারে ছিল তীব্র অভাব। পাতে উঠত না ভালো খাবার। থাকতেন মাটির ঘরে। সেলুনে কাজ করে যে টাকা আয় করতেন, তা দিয়ে সংসার চলত না। একপর্যায়ে গরু পালন শুরু করেন। গড়ে তোলেন খামার। সকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত গরুর পরিচর্যা, খাবার খাওয়ানোসহ পরিকল্পিতভাবে পালন করায় তিনি কয়েক বছরের মধ্য সাফল্য পান। প্রতিবছর গরু ও গরুর দুধ বিক্রি করে সংসারে সচ্ছলতা এসেছে তাঁর। এখন থাকেন একতলা ভবনে। কিনেছেন সাত বিঘা জমি। তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বেশ কয়েকজন গরু পালন শুরু করেছেন। তাঁরাও পেয়েছেন সাফল্য।

নরসুন্দর থেকে গরুর খামারি বনে যাওয়া এই পরিশ্রমী ব্যক্তির নাম বিমল প্রামাণিক (৫৮)। তিনি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার ছয়খাদা গ্রামের মৃত কার্তিক প্রামাণিকের ছেলে। প্রতিবছর তিনি গরু বিক্রি করে পাঁচ লাখ টাকায় আয় করেন। তাঁর খামারে কোনো বিদেশি জাতের গরু নেই। তিনি গরুগুলোকে শুধু ঘাস ও খড় খাওয়ান। তাই তাঁর খামারের মাংস সুস্বাদু। এ ছাড়া তাঁর খামারে ১০টি গাভি আছে। এসব গাভি থেকে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৬ লিটার দুধ পাওয়া যায়। এই দুধ বিক্রি করেও তিনি প্রতিদিন ৭০০-৭৫০ টাকা আয় করেন। গরু ও দুধ বিক্রি করে তিনি বছরে ৮-৯ লাখ টাকা আয় করেন। 

অনেক পরিশ্রম করে ও বাধা পেরিয়ে এই অবস্থানে আসার কথা জানালেন বিমল প্রামাণিক। ছোটবেলা থেকেই নরসুন্দরের কাজ শুরু করেন তিনি। প্রথমে অন্যের সেলুনে কাজ করতেন। একপর্যায়ে সাব্দালপুর বাজারে নিজে একটি সেলুন দেন। সেখানে নরসুন্দরের কাজ করে সংসার চালাতে কষ্ট হতো। তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে আছেন। ছেলে ননী প্রামাণিক ও প্রহ্লাদ প্রামাণিককে গরুর খামার থেকে আয় হওয়া টাকা দিয়ে বিদেশে পাঠিয়েছেন। একমাত্র মেয়ে চন্দনা সরকারকে বিয়ে দিয়েছেন। 

গরুর খামারের চিন্তা মাথায় এল কীভাবে, জানতে চাইলে বিমল প্রামাণিক বলেন, আনুমানিক ৩৪ বছর আগে তিনি ঝিনাইদহের বংকিরা গ্রামের নারায়ণ প্রামাণিকের কন্যা পদ্মা রানীকে বিয়ে করেন। বিয়ের দুই বছর পর তাঁদের ঘরে এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। তাঁরা নাম রাখেন প্রহ্লাদ প্রামাণিক। এই প্রহ্লাদের জন্মের পর দুধ খেতে একটা গাভি উপহার দেন তাঁর শ্বশুর। এই গরু বাড়ি এনে তিনি সেলুনে কাজের পাশাপাশি গরু লালন-পালন করতে থাকেন। প্রতিদিন দোকানে যাওয়ার আগে গরু মাঠে বেঁধে রেখে যেতেন, বাড়ি ফেরার পথে নিয়ে ফিরতেন। এভাবে গরু লালন-পালন করতে থাকলে ওই গাভিটি বাচ্চা দিতে শুরু করে। বছরে একটি করে বাচ্চা দেয়। আবার বাচ্চা গরুও বড় হয়ে একসময় সেটাও বাচ্চা দেয়। এভাবে মাত্র ৭ বছরে তাঁর ১০টি গরু হয়ে যায়। এগুলো মাঠে খাওয়াতে গিয়ে সেলুনের কাজ ছেড়ে দেন। শুরু করেন গরু নিয়ে মাঠে চরানো। 

বিমল প্রামাণিক জানান, সকাল হলে ঘুম থেকে উঠে তিনি গরুর যত্ন নেন। প্রথমে গোয়ালের গোবর ফেলানো, তারপর গরুকে গোসল করান। এরপর গোয়ালা এলে দুধ দোহান। এসব কাজে তাঁকে সহায়তা করেন তাঁর স্ত্রী পদ্মা রানী। তারপর সকালের খাবার খেয়ে গরুর পাল নিয়ে চলে যান দূরের মাঠে। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে গোসল শেষে খাবার খান। এভাবে আনুমানিক ২৫ বছর তিনি গরু চরাচ্ছেন। 

বিমল আরও জানালেন, তিনি গরু নিয়ে পাশের লক্ষ্মীপুর, পাঁচলিয়া, কামারকুণ্ডু, মামুনশিয়া, বহিরগাছি, সুবোদী, সাহাপুর, মানিকদিহি, পাকা, দয়ারামপুরসহ বেশ কিছু এলাকার মাঠে চলে যান গরু নিয়ে। তবে মাঠের জমিগুলোতে চাষ শুরু হলে একটু বেশি দূরে যেতে হয়। আর এই সময় বাড়িতে একটু বেশি খড়-বিচালি দেন। 

বিমল প্রামাণিক তাঁর কষ্টের দিনগুলোর কথা স্মরণ করে বলেন, তিনি যখন বিয়ে করেন, তখন তাঁর বাড়িতে ৮ শতক জমি ছিল। এই জমির ওপর মাটির ঘরে বসবাস করতেন। মাঠে ছিল মাত্র ২০ শতক জমি। খুব কষ্ট করে তাঁদের সংসার চলেছে। এখন তিনি গরু পালন করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। মাঠে ছয় বিঘা জমি কিনেছেন, বাড়িতেও এক বিঘা কিনেছেন। ছেলেদের বিদেশে যাওয়ার সব টাকা তিনি দিয়েছেন। একতলা ভবন করেছেন। সংসারও ভালোই চলছে।