দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিএনপির ৯ নেতা–কর্মী এবার খুলনা সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ কারণে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার হয়েছেন তাঁরা। ভোটের লড়াইয়েও কপাল খোলেনি তাঁদের। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা–কর্মীদের মধ্যে কেবল একজন সংরক্ষিত ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।
খুলনা সিটি করপোরেশনে সাধারণ ওয়ার্ড ৩১টি, সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড ১০টি। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের মধ্যে ৩০ জনই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী। বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে ১৫ জন পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে দুজন এবার নির্বাচনে প্রার্থী হননি। অন্য একজনের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়।
বিএনপির কাউন্সিলরদের পরাজয়ের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, সংরক্ষিত ও সাধারণ ওয়ার্ড মিলিয়ে প্রার্থী হওয়া নয়জনের মধ্যে জেতার মতো প্রার্থী ছিলেন মাত্র চারজন। আবার নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার জন্য বিএনপি এবার কঠোর অবস্থানে ছিল। এমনকি কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিলেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি তদারকিতে গোপন মনিটরিং সেলও করা হয়। এ কারণে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ভোটকেন্দ্রে খুব একটা যাননি। অভ্যন্তরীণ গ্রুপিংয়ের কারণেও প্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আবার অনেক ওয়ার্ডে বহিষ্কার হওয়া প্রার্থীকে হারাতে বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী এককাট্টা হয়ে অন্য প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। এ ছাড়া বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী গোপনে বা প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষেও কাজ করেছেন।
বিএনপি খুলনা সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। তখন সাধারণ ওয়ার্ডে বিএনপি–সমর্থিত কাউন্সিলর নির্বাচিত হন নয়জন। বিএনপির সমর্থন পেয়ে পরে বহিষ্কার হয়েও একজন কাউন্সিলর হয়েছিলেন। আর সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে বিএনপি–সমর্থিত একজন কাউন্সিলর বিজয়ী হয়েছিলেন। এই ১১ জনের মধ্যে ৮ জন বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
এবার দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শেখ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে তোতন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের টানা তিনবারের কাউন্সিলর আশফাকুর রহমান, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মো. মাহবুব কায়সার, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি কর্মী ও সাবেক কাউন্সিলর মুহা. আমান উল্লাহ, সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির সাবেক সমবায়বিষয়ক সম্পাদক মাজেদা খাতুন, দৌলতপুর থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মুশফিকুস সালেহীন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সাবেক স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা কাজী ফজলুল কবির ওরফে টিটো, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সাবেক ছাত্রদল নেতা ইমরান হোসেন ও খুলনা মহানগর তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন মাতুব্বরকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
তাঁদের মধ্যে সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির সাবেক সমবায়বিষয়ক সম্পাদক মাজেদা খাতুন জিতেছেন।
এবার নগরের ছয়টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে জামায়াতপন্থী নেতারা প্রার্থী হন। নগরের ১ নম্বর ওয়ার্ডে দৌলতপুর থানা জামায়াতের নায়েবে আমির এস এম আজিজুর রহমান, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সরকারি বিএল কলেজ ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি আশরাফ হোসেন, ১২ নম্বরে মহানগর জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির শফিকুল আলম, ১৮ নম্বরে ওয়ার্ড জামায়াতের আমির মাশিউর রহমান, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে সোনাডাঙ্গা থানা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি মনিরুল ইসলাম এবং ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল প্রার্থী হয়েছিলেন। এই ৬ জনের মধ্যে শুধু ১২ নম্বর ওয়ার্ডে শফিকুল আলম বিজয়ী হয়েছেন।