প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘হত্যার হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদের বিরুদ্ধে নেত্রকোনায় মামলা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান ওরফে ভিপি লিটন বাদী হয়ে নেত্রকোনা সদর আমলি আদালতে মামলাটি করেন। পরে বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লুৎফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকির দেওয়ার অভিযোগে দণ্ডবিধি ১২০ (ক) ৫০০/৫০৬ ধারায় আদালতে মামলা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের তালা ভেঙে আসবাবে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
মামলার এজাহার ও বাদীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯ মে বিকেলে পুঠিয়ার শিবপুর হাট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির আয়োজনে একটি সমাবেশ হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ। সেখানে তাঁর দেওয়া বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাইতে হবে।’ এ ছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে মানহানিকর ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেন। যা দৈনিক সমকালসহ বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে।
মামলার বিষয়ে বাদী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রকাশ্যে জনসভায় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিএনপি নেতা আবু সাইদ যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর জন্য অত্যন্ত মর্যাদাহানিকর এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। শেখ হাসিনার এক অনুসারী কর্মী ও দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি বিষয়টি মেনে না নিতে পেরে সংক্ষুব্ধ ও মর্মাহত হয়ে মামলাটি দায়ের করেছি। আমি অবিলম্বে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’
এদিকে শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে মামলা দায়েরের আগে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল হয়। এতে দলের অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা অংশ নেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমানের নেতৃত্বে শহরের ছোটবাজার এলাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের হয়ে মোক্তারপাড়া সেতু এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। এর কিছুক্ষণ পরে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কিছু উচ্ছৃঙ্খল নেতা–কর্মী ছোটবাজার এলাকায় বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। পরে কার্যালয়ের তালা ভেঙে সেখান থেকে প্লাস্টিকের চেয়ার–টেবিল বাইরে এনে আগুন ধরিয়ে দেয়।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক চিকিৎসক আনোয়ারুল হক মুঠোফোনে বলেন, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কিছু উচ্ছৃঙ্খল নেতা–কর্মী দলীয় স্লোগান দিয়ে বিএনপি অফিসের তালা ভেঙে ভেতরের আসবাব বের করে কার্যালয়ের সামনে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে তামশা দেখছিল। পরে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পানি ঢেলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ছাড়া শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফা জেসমিনের বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। তবে বিএনপির কার্যালয়ে তালা ভেঙে চেয়ারে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক বলেন, ‘এ রকম কোনো ঘটনা আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠন ঘটায়নি। যতটুকু জানি, জেলায় বিএনপির মধ্যে বিবদমান দুটি পক্ষ আছে। তারা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে হয়তো এ ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের ওপর দোষ চাপাতে চাচ্ছে।’