চলাচলের জন্য বেতনা নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে পানি আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে ভোগান্তি বাড়বে।
কাজীরবেড়-ইসলামপুর মোড়ে বেতনা নদীতে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
এই সেতু নির্মাণে ৬ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের নাভারন মোড় থেকে গৌড়পাড়া সড়কে দুটি সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। তবে সেতু নির্মাণের নীতিমালা লঙ্ঘন করে বেতনা নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অথচ নির্মাণকাজ চলাকালে নদীর দুই পারের মানুষের চলাচলের জন্য কাঠের সেতু নির্মাণে প্রকল্পে অতিরিক্ত টাকা বরাদ্দ ধরা আছে। এতে একটু বৃষ্টি হলেই মানুষের চলাচল যেমন ব্যাহত হবে, তেমনি বাঁধে পানি আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গত রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, শার্শা উপজেলার নাভারন মোড় থেকে পিচঢালা সরু পথ চলে গেছে নিজামপুর ইউনিয়নের দিকে। এই সড়কের কাজীরবেড়-ইসলামপুর মোড়ে বেতনা নদীতে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
স্থানীয় ও এলজিইডি সূত্রে গেছে, ৬০ দশমিক ৬ মিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণে ৬ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যশোরের আইসিএল প্রাইভেট লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৫৪০ দিনের মধ্যে শেষ করার শর্তে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ৩ জুলাই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। কিন্তু সেতুর কাজের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এখনো সেতুর পিলার নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ চলছে।
নির্মাণাধীন সেতুর পাশে নদী ভরাট করে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে যানবহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নদীর ভেতর দিয়ে প্রাইভেট কার, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, ভ্যানসহ যানবাহন চলাচল করছে।
এই সেতু থেকে এক কিলোমিটার দূরে একই সড়কের শেয়ালঘোনা গাতিপাড়া ও নিশ্চিন্তপুর গ্রামের সংযোগস্থলে একই ধরনের আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এই সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৩ লাখ টাকা। এই সেতুর নির্মাণকাজ কিছুটা এগিয়েছে। সেতুর পিলার নির্মাণের জন্য ঢালাইয়ের কাজ চলছে। মানুষের চলাচলের জন্য সেতুর পাশে একটি অস্থায়ী কাঠের সেতু নির্মাণ করা হলেও তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই সেতুর দুই পাশে কোনো রেলিং নেই। ভ্যান, মোটরসাইকেল উঠলে সেতু নড়ে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ওই সেতুর উল্টো দিকে নদীর মধ্যে মাটি ফেলে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে নির্মাণশ্রমিকদের চলাচল করতে দেখা গেল। এই সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
নদীপাড়ের চায়ের দোকানে বসা স্থানীয় লোকজন বলেন, নদীর ওপরে যে উচ্চতায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে, তা যথেষ্ট নয়। বর্ষা মৌসুমে সেতুর নিচে ফাঁকা জায়গা থাকবে কম। ভবিষ্যতে নৌযান চলাচল করতে পারবে না। তা ছাড়া নির্মাণকাজে অত্যন্ত ধীরগতি। সেতু দুটি চালু হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ, দুই এলাকার গ্রামের মধ্যে গাড়িতে চলাচল করতে অন্তত সাত কিলোমিটার ঘুরে যেতে হচ্ছে। এতে আমাদের দুর্ভোগ বাড়ছে।
শার্শা ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সুজা উদ দৌলা বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের খেয়ালখুশিমতো সেতুর নির্মাণকাজ করছে। মূল সেতু নির্মাণের সময় চলাচলের জন্য অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা দেওয়া হয়নি। নদীর মধ্যে মাটি ফেলে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে পথ তৈরি করা হয়েছে।
এই বাঁধের কারণে নদীর পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করবে। আমরা দেখেছি, নির্মাণকাজের মেয়াদ শেষ হলেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্রুত চলে যায়। তারা সেতুর নিচের মাটি আর সরিয়ে দেয় না। এতে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে পানিপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডে দেখার কথা থাকলেও কোনো কর্মকর্তা এক দিনের জন্যও এখানে আসেননি।’