ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে ‘হ্যাটট্রিক’ করেছেন। ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ ভোট পেয়ে তিনি জয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে পেয়েছেন ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬টি ভোট।
কাজী জাফর উল্যাহকে তৃতীয়বারের মতো পরাজিত করেছেন নিক্সন চৌধুরী। ২০১৪ সালে নিক্সন চৌধুরী ২৬ হাজার ৫২ ভোটের ব্যবধানে, ২০১৮ সালে ৪৫ হাজার ৯৪৫ ভোটের ব্যবধানে এবং এবার ২৩ হাজার ৯৬৯ ভোটের ব্যবধানে কাজী জাফর উল্যাহকে পরাজিত করেন। কাজী জাফর উল্যাহ এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন।
২০১৪ সালে ফরিদপুরের ভাঙ্গার পাশের মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া মহল্লার বাসিন্দা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে কাজী জাফর উল্যাহকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করেন। এরপর ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগ এই দুই নেতার নেতৃত্বে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। যত দিন গেছে, এই দুই ধারার বিরোধ বেড়েছে। স্থানীয় নেতাদের মধ্যেও বিরোধ বেড়েছে। ওই এলাকার আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে ‘দিনে কাজী জাফর উল্যাহ, রাতে নিক্সন’—কথাটি বেশ প্রচলিত। এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় কাজী জাফর উল্যাহ ও নিক্সন চৌধুরীর কাদা-ছোড়াছুড়ি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, এবারের নির্বাচনে নিক্সন চৌধুরীর প্রচারণার মূল সুর ছিল এলাকার উন্নয়ন করা, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং ফরিদপুর-৪ আসনভুক্ত তিনটি উপজেলাকে বাংলাদেশের মধ্যে সেরা উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি। তরুণদের মধ্যে নিক্সন চৌধুরীকে নিয়ে বেশ আগ্রহ ও উদ্দীপনা আছে। তরুণদের সঙ্গে তিনি বেশ সুসম্পর্ক রেখে চলেন। ফলে তরুণেরা তাঁকে বেশ কাছের মানুষ মনে করেন।
নিক্সনের সমর্থক ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘ভোটারদের ভালোবাসায় জিতে হ্যাটট্রিক করেছেন নিক্সন চৌধুরী। তিনি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেন না। কথা অনুযায়ী কাজ করেন। বিপদে-আপদে মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান। এ জন্য ভোটের মাধ্যমে জনগণ তাঁদের আস্থা ও ভালোবাসার পরিচয় দিয়েছেন। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই নির্বাচনী ফলাফলে।’
নিক্সন চৌধুরী ২০২০ সালে যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন। এবার তিনি আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক চান। তবে দল মনোনয়ন দেয় কাজী জাফর উল্যাহকে। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী নিক্সন বলেছিলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে হ্যাটট্রিক করব। আমার চাচা (কাজী জাফর উল্যাহ) পরাজিত হয়ে হ্যাটট্রিক করবেন।’ ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী সভায় তিনি বলতেন, ‘আমার ফুপু (শেখ হাসিনা) ওনাকে (কাজী জাফর উল্যাহ) নৌকা দিয়েছেন, কিন্তু বইঠাটা আমাকে দিয়েছেন।’
স্থানীয় মানুষদের ভাষ্য, কাজী জাফর উল্যাহর তরুণদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই। তবে তিনি তরুণদের চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে তিনি নারী ভোটারদের কাছে বেশি করে ভোট চেয়েছিলেন। এলাকার উন্নয়নের কথাও তুলে ধরেছেন।
কাজী জাফর উল্যাহর অনুসারী ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আকরামুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ সংসদীয় আসনে তিনটি উপজেলার মধ্যে আমরা ভাঙ্গায় ভালো করেছি। নিক্সনের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছি। তবে আমরা হেরে গেছি সদরপুর ও চরভদ্রাসনে।’ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ভাঙ্গার তুলনায় সদরপুর ও চরভদ্রাসনে আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা ছিল। পাশাপাশি প্রতিপক্ষের নির্বাচনী কৌশল আমরা ভাঙ্গায় যতটা প্রতিহত করতে পেরেছি, ওই দুটি উপজেলায় তা পারিনি।’