তিন দিন পরও বাড়িতে ফেরেননি তরুণী ও তাঁর মা

খুলনা জেলার মানচিত্র
খুলনা জেলার মানচিত্র

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা তরুণী ও তাঁর মায়ের খোঁজ এখনো মেলেনি।

গত শনিবার খুলনা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে তাঁকে এক মাইক্রোবাসে কয়েকজন যুবক তুলে নিয়ে যায়। রাতে সোনাডাঙ্গা থানায় এসে তরুণী বলেন, তিনি এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। থানা থেকে বের হয়ে যাওয়ার তিন দিন পরও খোঁজ মিলছে না তাঁদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল বুধবারও তাঁরা বাড়িতে যাননি। ওই তরুণীর ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ রয়েছে। তরুণীকে খুঁজে না পাওয়া গেলেও থানায় বা অন্য কোথাও এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করেনি। পুলিশ বলছে, পরিবারের লোকজন তরুণীকে উদ্ধার বা ধর্ষণের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ করতে চান না। আর অভিযোগ না করায় তাঁরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।

গতকাল বিকেলে জানতে চাইলে ওই তরুণীর মামাতো ভাই বলেন, তাঁরা এখনো ওই দুজনের খোঁজ জানেন না। তরুণী ও তাঁর মা নানাবাড়িতে থাকেন। সেখানে খোঁজ নেওয়ার বা থানায় অভিযোগ করার মতো কেউ নেই।

এর আগে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে গত শনিবার রাত সোয়া ১১টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি হন ওই তরুণী (২৮)। সেদিন বিকেলে ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ তাঁকে ধর্ষণ করেছেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান তিনি। পরদিন দুপুরে তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা শেষ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ছাড়পত্র দেয়। বিকেলে ওসিসির সামনে হাসপাতাল চত্বর থেকে একদল যুবক ওই তরুণী ও তাঁর মাকে জোর করে সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যান। এ সময় রুদাঘরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। তৌহিদুজ্জামান ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের চাচাতো ভাই।

ওই দিন রাত পৌনে ১১টার দিকে ওই তরুণীকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সোনাডাঙ্গা থানায় হাজির করা হয়। সেখানে তিনি পুলিশ ও সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে অপহরণ করা হয়নি। আমি আমার আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে গিয়েছিলাম।’ এরপর ওই তরুণী ও তৌহিদুজ্জামানকে সোনাডাঙ্গা থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

যে গাড়িতে করে হাসপাতাল চত্বর থেকে তরুণী ও তাঁর মাকে টানাহেঁচড়া করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই গাড়িতে করেই তাঁদের থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন যুবক। সোনাডাঙ্গা থানায় নিয়ে আসার সময় ওই মেয়ের সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা ও অন্য এক নারী। থানা থেকে আবারও ওই গাড়িতে করে তাঁদের ডুমুরিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। বলা হয়েছিল মেয়েটিকে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। পরদিন দুপুরে বাড়িতে গিয়ে ওই তরুণী ও তাঁর মাকে পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তাঁরা ওই দুজনের ব্যাপারে কিছু জানেন না।

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে ওই তরুণীর বাড়িতে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের আত্মীয়স্বজন কোনো অভিযোগ করতে চান না। তরুণী ও তাঁর মাকে উদ্ধার করে দিতে হবে বা তাঁরা নিখোঁজ রয়েছেন—সে ব্যাপারেও কেউ কিছু বলছেন না। এ কারণে পুলিশের পক্ষ থেকে আর বেশি খোঁজ নেওয়া হয়নি।