কুষ্টিয়ার মোকামে উৎপাদিত সব ধরনের চাল মিলগেটে কেজিপ্রতি এক টাকা করে কমিয়ে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মিলমালিকেরা। আজ বুধবার বিকেলে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভা শেষে এ সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। ওই সভায় জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান মিলমালিকদের পক্ষ থেকে এই দাম কমানোর বিষয়টি ঘোষণা দেন।
সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে সভার সমাপনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘কুষ্টিয়ার মোকামে উৎপাদিত সব ধরনের চাল মানভেদে এক টাকা করে কমে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, যা আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে এবং দুই সপ্তাহ পর্যন্ত চালের কোনো দাম বাড়বে না।’
বিকেল সাড়ে চারটায় জেলা প্রশাসকের সঙ্গে মিলমালিক ব্যবসায়ী ও নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শুরু হয়। সভায় বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতি কুষ্টিয়া শাখার নেতারাসহ খাজানগর এলাকার বড় বড় অটো রাইস মিলের মালিকেরা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে এ সভা চলে।
গত শনিবার প্রথম আলোতে কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে চার দিনের ব্যবধানে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে চার টাকা বেড়েছে শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। তাতে বলা হয়, চার দিনে দুই দফায় এই দাম বাড়িয়েছেন মিলমালিকেরা। মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৭২ টাকায়।
সভায় জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক আল ওয়াজিউর রহমান জানান, গত ৩ সপ্তাহে মিলগেটে মোটা চাল কেজিপ্রতি ২ টাকা, কাজললতা ৩ টাকা ও মিনিকেট চাল ৪ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। আমন ধান এক সপ্তাহ হলো কাটা শুরু হয়েছে। ভরা মৌসুমে হঠাৎ করে এত দাম বাড়ানোর কারণ মিলমালিকদের কাছে জানতে চান।
বক্তব্যে খাজানগর এলাকার সবচেয়ে বড় চাল ব্যবসায়ী দেশ অ্যাগ্রো ফুডের স্বত্বাধিকারী আবদুল খালেক বলেন, ‘বড় বড় আটটি করপোরেট কোম্পানি রয়েছে, বাজারে ধানের দাম তারাই বাড়াচ্ছে। তাদের ধরেন আগে। তা ছাড়া দেশে যে বন্যা হয়ে গেছে, তাতে ধানের উৎপাদন তেমন হয়নি। এমনকি বর্তমানে ধানের দামও বেশি। এ জন্য চালের দাম বাড়াতে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন।’ এক ব্যবসায়ী দাবি করেন, বাজারে এখন ধান নেই। মিনিকেট ধানও নেই।
ব্যবসায়ীদের এ কথার জবাবে কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, ‘দেশে ধানের কোনো সংকট নেই। ধান পর্যাপ্ত রয়েছে। কৃষক সপ্তাহখানেক হলো ধান কাটা শুরু করেছেন। আপনাদের তথ্য সঠিক নয়। ধানের ফলনও এবার ভালো হচ্ছে।’
প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা সভায় বলেন, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় দ্রুত যোগাযোগ করে দিনের শুরুতে চালের দাম নির্ধারণ করে থাকেন মিলমালিকেরা। এমন বিষয় জেলা প্রশাসকও অবগত রয়েছেন। এমনকি করপোরেট ব্যবসায়ীদের কাছে জেলার কয়েকজন মিলমালিক যোগসাজশ করে চাল তাঁদের কাছে সরবরাহ করার তথ্যও রয়েছে। এটা না করার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।
সভায় বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতি কুষ্টিয়ার সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদীন প্রধান বলেন, ৮০ শতাংশ মিলমালিক মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৭০ টাকা দরে বিক্রি করেন। মাত্র ২০ শতাংশ মিলমালিক ৭২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। মিলগুলোর পাশাপাশি বাজারে কারা ধান মজুত করে রেখেছেন বা দাম বাড়াচ্ছেন, তাঁদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে তিনি আহ্বান জানান।
মিলমালিকদের উদ্দেশে জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘আপনারা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বের হয়ে আসেন। দেশপ্রেমী হোন। আগামী দুই সপ্তাহ চালের কোনো দাম যেন না বাড়ে। এই দাম কমানোর বিষয়টি অন্যান্য জেলাতেও যেন হয়, এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন।’
মিলমালিকেরা জানিয়েছেন, জেলায় ৬৪টি অটো রাইস মিল রয়েছে। তাদের উৎপাদিত চাল ঢাকাসহ দেশের ৩৫ জেলায় প্রতিদিন অন্তত দেড় শ ট্রাকে যায়। গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম ছিল ৬৭ টাকা। ১০ অক্টোবর সেই দাম কমে দাঁড়ায় সাড়ে ৬৬ টাকায়। এর পর থেকে এই চালের চাহিদা বাড়তে থাকে।
মতবিনিময় সভায় কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন আখতার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পার্থ প্রতিম শীল, কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মোকাররম হোসেন, মিলমালিক সমিতির নেতা আবদুস সামাদ, জামশেদ আলী, আরশেদ আলী ও গোল্ডেন অটো রাইস মিলের মিলের মালিক জিহাদুজ্জামান জিকু উপস্থিত ছিলেন।