নির্মাণাধীন কালভার্টের দুই পাশে মাটি ফেলে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই মাটিতে ট্রাক দেবে যাচ্ছে।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় ফাঁসিতলা খালের ওপর নির্মাণাধীন কালভার্ট পার হতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন ভারী যানবাহনের চালকেরা। গত দুই সপ্তাহে মালবাহী অন্তত ১৫টি ট্রাক পার হতে গিয়ে আটকে গেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সকাল ও রাতে দুটি ট্রাক আটকে যায়।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের তত্ত্বাবধানে ক্ষেতলাল-আক্কেলপুর সড়কে ওই কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। সওজের প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই প্রকল্পে বিকল্প সড়ক নির্মাণের জন্য বরাদ্দ নেই। নতুন কালভার্টের অর্ধেক (ছয় মিটার) নির্মাণ করার পর পুরোনো কালভার্ট ভেঙে ফেলা হয়েছে। নতুন কালভার্টের দুই পাশে মাটি ফেলে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই মাটিতে ট্রাক দেবে যাচ্ছে।
যানবাহনের চালকেরা চলছেন, সওজ ও ঠিকাদারের সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে তাঁরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। কালভার্টের কাছে দেবে যাওয়া একেকটি ট্রাক টেনে তুলতে ৭-৮ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।
এ সম্পর্কে স্থানীয় মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ বলেন, ক্ষেতলাল-আক্কেলপুর সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়কে প্রতিদিন হাজারো যানবাহন চলাচল করে। খালের পাশে বিকল্প সড়ক নির্মাণ না করেই পুরোনো কালভার্ট ভেঙে ফেলা হয়েছে। এতে ভোগান্তি হচ্ছে। বিকল্প সড়ক থাকলে ভোগান্তি হতো না। কালভার্ট নির্মাণে বাস্তবায়নকারী সংস্থা সওজ এবং ঠিকাদারের পরিকল্পনার অভাব রয়েছে।
সওজের জয়পুরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফাঁসিতলা খালের ওপর পুরোনো অপ্রশস্ত কালভার্ট ভেঙে নতুন করে ১২ মিটার কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কাজে বরাদ্দ ৮৯ লাখ টাকা। নওগাঁর ঠিকাদার আমিনুল হক কাজটি পেয়েছেন। ঠিকাদার গত মে মাসে কাজ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে কালভার্টের অর্ধেক (ছয় মিটার) নির্মাণ করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় ওই সড়কের ফাঁসিতলায় গিয়ে দেখা যায়, কালভার্টের উত্তর দিকের মুখে বালুবোঝাই একটি ট্রাকের চাকা দেবে আছে। ১০-১২ জন চেইন পুলি (টেনে তোলার যন্ত্র) দিয়ে ট্রাকটির চাকা টেনে তোলার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় সড়কের দুই পাশে বহু যানবাহন ও মানুষ আটকা পড়েন। প্রায় ৪০ মিনিট পর ট্রাকটি টেনে সড়কে তোলা হয়। এরপর ছোট যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বালুবোঝাই ট্রাকের চালক এনামুল হক বলেন, ‘২০ দিন আগে এই সড়ক দিয়ে হিলি গিয়েছিলাম। তখন ফাঁসিতলায় এমন অবস্থা ছিল না। বৃহস্পতিবার রাত তিনটায় ফাঁসিতলা কালভার্টে ওঠার আগে ট্রাকের চাকা ফেঁসে গেছে। ভোর থেকে চেষ্টার পর সকাল ১০টার পর ট্রাকটি ওঠানো হয়। এতে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখানে বিকল্প সড়ক নির্মাণের দরকার ছিল।’
যানবাহন টেনে তোলার যন্ত্র চেইন পুলের দেখভালকারী বারইল গ্রামের আবদুল ওহাব বলেন, ‘গত ১০-১২ দিনে ফাঁসিতলা কালভার্টে ১৫-২০টি মালবোঝাই ট্রাক ফেঁসেছে। প্রতিটি ট্রাক টেনে ওপরে তুলতে ৭-৮ হাজার টাকা নিচ্ছি।’
যানবাহনের চালক ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পুরোনো কালভার্টের প্রস্থ ছিল কম। এ কারণে কালভার্ট পারাপারের সময় দুর্ঘটনা ঘটত। গত মে মাসে ফাঁসিতলা খালের ওপর কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তখনো পুরোনো কালভার্টটি দিয়ে যানবাহন চলাচল করছিল। পশ্চিম পাশে নতুন কালভার্টের অর্ধেক অংশের নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। ১৫ দিন আগে ঠিকাদার পুরোনো কালভার্ট ভেঙে ফেলেন।
এরপর নতুন অর্ধেক কালভার্টের দুই পাশে কাদামাটি দিয়ে যানবাহন ও মানুষ চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। বৃষ্টিতে মাটি ধসে যায়। পরে সেখানে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়। কালভার্টের দুই পাশে মাটি নরম হওয়ায় যানবাহন দেবে যাচ্ছে। খালটি পানিতে ভরে যাওয়ায় ঠিকাদারের লোকজন এখন কাজ বন্ধ রেখেছেন।
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারের মুঠোফোনে একাধিক যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ঠিকাদারের ফাঁসিতলা সাইটের ব্যবস্থাপক জনি হোসেন বলেন, অর্ধেক কালভার্ট নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। পুরোনো কালভার্ট ভেঙে দেওয়ার পর বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কাজ করা যায়নি। কালভার্টের দুই পাশে রাস্তার মাটি বৃষ্টিতে নরম হয়ে আছে। এ কারণে ভারী যানবাহন ফেঁসে যাচ্ছে। সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ করে সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে।
সওজের জয়পুরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সৌম্য তালুকদার বলেন, সড়কের ফাঁসিতলা খালের ওপর ১২ মিটার কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে বিকল্প সড়ক নির্মাণে বরাদ্দ নেই। অর্ধেক অংশ (ছয় মিটার) কালভার্ট চালু করার পর পুরোনো কালভার্ট ভাঙা হয়েছে।