বিদ্যালয় ভবনের স্তম্ভে (পিলার) বড় বড় ফাটল ধরেছে। ছাদের বিভিন্ন স্থান থকে পলেস্তারা খসে পড়েছে। একটু বৃষ্টি হলে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। দরজা-জানালাও ভাঙা। ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এই চিত্র বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না হাইস্কুল-সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় গৌরিচন্না হাইস্কুল-সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই ভবনের মতো বরগুনা জেলার ৬ উপজেলার ১৬৯টি বিদ্যালয় ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে ক্লাসে আসছে না। আর অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেচে, বরগুনা জেলায় ৭৯৮ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যারয় আছে। এর মধ্যে ১৬৯টি বিদ্যালয় ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব ভবনের নিরাপত্তা পিলারে বড় বড় ফাটল ধরেছে। এ ছাড়া ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে, একটু বৃষ্টি হলে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। এরপরও আতঙ্কের মধ্যেই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। এমন চিত্র দেখা গেছে বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না হাইস্কুল-সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রতিটি উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে।
বরগুনা জেলা ও ছয়টি উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা জেলায় ৭৯৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২২৭টি বিদ্যালয়ের ভবনের মধ্যে ৪১টি, আমতলীতে ১৫২টির মধ্যে ৩১টি, বেতাগী উপজেলায় ১২৯টির মধ্যে ২৪টি, বামনা উপজেলায় ৬২টির মধ্যে ১৯টি, পাথরঘাটা উপজেলায় ১৪৯টির মধ্যে ৩৩টি, তালতলীতে ৭৯টির মধ্যে ২১টি বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে ১৯৯৪-২০০২ সালে ওই ১৬৯টি ভবন নির্মাণ করা হয়। এসব ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে রড বেরিয়ে গেছে এবং বৃষ্টি হলে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। স্কুলভবনের কক্ষের ভেতরের দেয়ালে ফাটল ধরেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গৌরিচন্না হাইস্কুল-সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উত্তর আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে রড বের হয়ে আছে। স্তম্ভের পলেস্তারা খসে ভেতরের রড বেরিয়ে গেছে। ভবনগুলোর মেঝে দেবে গিয়ে ভেঙে গেছে। ভবনের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। দরজা ও জানালা ভেঙে গেছে। এই বিদ্যালয়ে ২০৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
গৌরিচন্না হাইস্কুল-সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাইনুল হোসেন বলেন, ‘বছর দুয়েক আগে স্কুলভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেন শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা। বিকল্প কোনো ভবন না থাকায় একরকম বাধ্য হয়ে পরিত্যক্ত বিদ্যালয় ভবনে পাঠদান করাতে হয়। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে একাধিকবার আবেদন করেছি একটি নতুন ভবন পাওয়ার জন্য। কিন্তু কোনো কিছুতেই যেন কাজ হচ্ছে না।’
বরগুনা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সদস্যসচিব লায়লা জেরীনা আকতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলায় ৪১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ। এসব ভবন নিয়ে আমরা শিক্ষা কমিটির সভা করেছি। আমরা এই তালিকা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কাছে হস্তান্তর করেছি। তারা বিষয়টি যাচাই করে দেখবে। যেটা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, সেটা পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নিলাম দেওয়া হবে।’