রাজশাহী সিটি নির্বাচন

স্বশিক্ষিত শাহাদতের ঝুলিতে এবার সর্বোচ্চ ভোট, পেলেন পঞ্চম জয়

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শাহাদত আলী
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পঞ্চমবারের মতো জয় পেয়েছেন ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শাহাদত আলী। স্বশিক্ষিত এই জনপ্রতিনিধি এবার সিটি নির্বাচনে জয়ী ৩০ কাউন্সিলরের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন। তিনি বলছেন, ডিগ্রি দিয়ে ভোট হয় না। মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াতে হয়।

রাজশাহী নগরের ৩০টি ওয়ার্ডে এবার ১১২ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই নির্বাচনের মোট সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ প্রার্থী ছিলেন স্নাতকোত্তর, ২০ দশমিক ৫৪ শতাংশ স্নাতক। এসএসসির নিচের শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রার্থী ছিলেন ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ।

হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরে শাহাদত আলী লিখেছেন স্বশিক্ষিত। এবার দিয়ে ছয়বার এই সিটি করপোরেশন নির্বাচন হলো। ২০১৩ সালে একবার ছাড়া তিনি বাকি পাঁচবারই নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর ওয়ার্ডের মোট ভোটার হচ্ছে ১৭ হাজার ১১৭ জন। মোট ভোট পড়েছে ৮ হাজার ৬৫৯টি।

শাহাদত আলী পেয়েছেন ৬ হাজার ৫৯৪টি। তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির শামীম রায়হান পেয়েছেন ২ হাজার ৬৫ ভোট। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে শাহাদত আলী ছাড়া সবাই ৬ হাজারের নিচে ভোট পেয়েছেন। ৫ হাজারের ওপর এবং ৬ হাজারের নিচে ভোট পেয়েছেন মাত্র দুজন। তাঁরা হলেন—১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৌহিদুল হক। চার হাজার ও তার কিছু বেশি ভোট পেয়েছেন তিনজন প্রার্থী।

তাঁরা হলেন—১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রজব আলী, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাসেল জামান ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আরমান আলী। বাকি প্রার্থীরা চার হাজারের নিচে ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। অবশ্য একেক ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা একেক রকম।

শাহাদত আলী দাবি করেছেন, তিনি আরও অনেক বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হতেন, কিন্তু মানুষ ভোট দিতে পারেননি। বৃষ্টিতে ৪০০ থেকে ৫০০ নারী ভোটার ভিজে বাড়ি গেছেন। তাঁরা আর ফিরে আসেননি। আর ইভিএম ভোট দেওয়ার সময় আঙুলের ছাপ না মেলার কারণে প্রায় ২০০ ভোটারকে বিকেলে আসতে বলা হয়েছিল। তাঁরা আর পরে ভোট দিতে পারেননি।

একজন স্বশিক্ষিত হয়ে কীভাবে তিনি বারবার নির্বাচিত হচ্ছেন, এত বেশি ভোট পাচ্ছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে ডিগ্রি দিয়ে ভোট হয় না। বিপদে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয়। তিনি এই কাজই করেন। আর আত্মঅহংকার করেন না। এতেই মানুষ ভালোবাসেন। ভালোবেসে ভোট দেন।

শাহাদত আলী বলেন, এখন বিএ পাস করলেই কি কেউ শুদ্ধ করে একটা দরখাস্ত লিখতে পারেন? তাঁর কার্যালয়ের বিএ পাস করা সচিবদের যত দরখাস্ত তাঁকে বলে বলে লেখাতে হয়। এটা কীভাবে পারেন, জানতে চাইলে শাহাদত আলী বলেন, অভিজ্ঞতায় এটা হয়েছে।

স্বশিক্ষিত প্রার্থী হয়েও বারবার নির্বাচিত হওয়া এবং সর্বোচ্চ ভোট পাওয়ার ব্যাপারে সুজনের রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমদ সফিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অর্থ-বিত্ত ও প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। দীর্ঘদিন কাউন্সিলর থাকার কারণে তাঁর বিত্তবৈভব ও প্রভাব দুটিই সমানে বেড়েছে।

যেভাবেই অর্জন করা হোক, এই টাকাপয়সা তাঁরা আবার নিজের সমর্থকগোষ্ঠীর পেছনে ব্যয় করেন। তাঁদের বিপদে পাশে দাঁড়ান। তাঁরা উপকৃত হন। ভালোবেসে ভোট দেন। এখানে স্বশিক্ষিত আর উচ্চশিক্ষিতের বিষয়টি কাজ করে না।