এই মাঠেই ছেলে আর্চারি খেলেছে, আমি চা বিক্রি করেছি

সেলিনা খাতুন: খুবই ভালো। ছেলেকে নিয়ে আমি গর্বিত।

সেলিনা: তাঁরা বলছেন, সাগরের মা সোনার খনি পেয়েছেন।

সেলিনা: গিয়েছিলাম।

সেলিনা: সবাই আমাকে সাগরের আম্মা বলে পরিচয় করিয়ে দিল। আমি ছেলের গলায় মেডেল পরিয়ে দিলাম। আমার ছবি তুলল, ভিডিও করল। খুব ভালো লাগল। কিন্তু যাঁরা চিরদিন আমাকে দুঃখী দেখেছেন, তাঁরা এই সুখ দেখে যেতে পারলেন না। আমার মা-বাবাও বেঁচে নেই। সাগরের বাবাও বেঁচে নেই। তাঁরা আজ থাকলে যে কী খুশি হতেন (বলতে বলতে চোখ মুছলেন)!

সেলিনা: অসুখে।

সেলিনা: চায়ের দোকান শুরু করলাম।

সেলিনা: অল্প কিছু জিনিস নিয়ে এসে বঙ্গবন্ধু কলেজ মোড়ে (রাজশাহী নগরের মহানন্দা আবাসিক এলাকায়) চায়ের দোকান শুরু করেছিলাম। তখন এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।

সেলিনা: মোটেও না। রাস্তার মোড়ে একটা মেয়ে মানুষ চায়ের দোকান চালাবে, এটা কেউ ভালো চোখে দেখেনি। তুলে দেওয়ার চেষ্টাও করেছে।

সেলিনা: আমি হাল ছাড়িনি। বরং সন্তানদের নিয়ে ভোর ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দোকানে থাকতাম।

সেলিনা: ওরা একসময় ক্ষান্ত দেয়।

সেলিনা: না। বিদ্যুৎ বিলসহ বাসাভাড়া ৫ হাজার টাকা। পাঁচজনের সংসার। চালানো খুব কঠিন।

সেলিনা: দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। দুই ছেলে ও এক মেয়ে পড়াশোনা করে। বড় ছেলে ও এক মেয়ে স্নাতকে। ছোট ছেলে বিকেএসপিতে (বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান)। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। বড়টা শ্বশুরবাড়িতে, ছোট মেয়েটা আমার সঙ্গে থাকে। বড় ছেলেটা বিয়ে করেছে।

সেলিনা: হ্যাঁ। একটি খালি প্লটের এক কোনায়।

সেলিনা: আরডিএর লোকেরাই। যে লোক উচ্ছেদের কথা বলেছেন, তাঁকে একদিন আরডিএর গাড়িতে দেখেছি।

সেলিনা: (কাঁদতে কাঁদতে) আমার সাগরকে আমি এই বাঁশের চরাটে শুইয়ে রেখেছি। এই মাঠেই (আরডিএর প্লট) ছেলে আর্চারি খেলেছে, আমি চা বিক্রি করেছি। আমি এই জায়গাটা ছাড়তে চাই না। এখানে সবাই চেনাজানা। ক্রেতাও আছেন। এখানে থাকতে পারলে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারব।

সেলিনা: এখন তো হচ্ছে না। প্লটটি খালি পড়ে থাকছে। সেখানে এক কোনায় আমার দোকানটি থাকলে কী এমন ক্ষতি!

সেলিনা: এসবি আর্চারি ক্লাবের সভাপতি সাইফুদ্দিন আমার ছেলের জন্য অনেক করেছেন। বিকেএসপি আমার আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ছেলের বেতন সীমিত করে দিয়েছিল। আর্চারি ফেডারেশনের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ছেলেকে সিটি গ্রুপ পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছে। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।