রংপুরে এলাকাভেদে লোডশেডিংয়ের যে সময়সূচি করা হয়েছে, তা মানা হচ্ছে না। এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের পর বিদ্যুৎ এলেও আবার আধঘণ্টা পর বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এমন অভিযোগ জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) কার্যালয় সূত্র জানায়, রংপুর জেলায় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ১৫০ থেকে ১৫৫ মেগাওয়াট। সেখানে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৭৫ মেগাওয়াট। চাহিদার প্রায় অর্ধেক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ কম। এ কারণে বিভাগীয় জেলায় আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে লোডশেডিং শুরু হয়েছে।
আজ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহরের কাচারি বাজার ও এর আশপাশের এলাকায় ৪ বার লোডশেডিং হয়েছে। এ সময় ১০ মিনিট থেকে আধঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং স্থায়ী হয়েছে।
আজ সকালে মুন্সিপাড়া এলাকায় সকাল ৮টায় বিদ্যুৎ চলে যায়। ৯টার দিকে বিদ্যুৎ এলেও তা আধঘণ্টা পর আবার চলে যায়। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল না। যদিও নেসকোর তালিকা অনুযায়ী, মুন্সিপাড়া ফিডারের আওতাধীন প্রায় ১২টি এলাকায় বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত লোডশেডিং হওয়ার কথা ছিল। তবে সকাল থেকেই ওই এলাকাগুলোতে কয়েক দফা লোডশেডিং হয়েছে।
নেসকোর পক্ষ থেকে জানা হয়েছিল, তালিকা অনুযায়ী কোনো এলাকায় ১ ঘণ্টা লোডশেডিং হলে তারপর সেখানে ২ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকবে। এলাকাভেদে লোডশেডিংয়ের পর ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকবে। তবে বাস্তবে এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে না।
আজ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহরের কাচারি বাজার ও এর আশপাশের এলাকায় ৪ বার লোডশেডিং হয়েছে। এ সময় ১০ মিনিট থেকে আধঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং স্থায়ী হয়েছে।
সকাল থেকে বিদ্যুৎ শুধু আসা-যাওয়া করছে। কোনো নিয়মের বালাই নেই। আমাদের মার্কেটে কখন বিদ্যুৎ থাকবে আর কখন থাকবে না, তা বিদ্যুৎ অফিসের কাছে জানতে চাই।আলতাফ হোসেন, স্থানীয় ব্যবসায়ী
কাচারি বাজারের আদালত এলাকার কম্পিউটার কম্পোজ ও ফটোস্ট্যাস্ট ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন বলেন, আদালত পাড়ায় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ব্যবসা হয়। কিন্তু এই সময়ে এখানে বিদ্যুৎ নেই। এলাকার গুরুত্ব বুঝে সেই এলাকা লোডশেডিং করা উচিত বলে তাঁর মতো।
এদিকে এলাকাভেদে লোডশেডিংয়ের বিষয়ে পত্রপত্রিকাসহ বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে সংবাদের পর রংপুর নগরের বিভিন্ন এলাকায় গ্রাহকেরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছেন। বাসাবাড়িতে পাম্প দিয়ে পানি তোলার কাজটিও রুটিনমাফিক শুরু হয়েছে।
তবে লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদনশীল ও গুদামজাত কারখানাগুলো চালাতে বিপাকে পড়ছেন মালিকপক্ষ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাঁদের নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।
রংপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে জেনারেটর দিয়ে হিমাগার চালানো হচ্ছে। এতে করে হিমাগারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এ কারণে মজুদকৃত পণ্যের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। আলু বীজের সমস্যা আরও বেশি দেখা দিতে পারে।
সকাল থেকে বিভিন্ন বিপণিবিতান ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি দোকানে পেট্রলচালিত জেনারেটর চলছে। ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘এ অবস্থায় দোকান খুলে কর্মচারীর বেতন দেওয়াও কষ্টকর হবে। সকাল থেকে বিদ্যুৎ শুধু আসা-যাওয়া করছে। কোনো নিয়মের বালাই নেই। আমাদের মার্কেটে কখন বিদ্যুৎ থাকবে আর কখন থাকবে না, তা বিদ্যুৎ অফিসের কাছে জানতে চাই।’
এ বিষয়ে নেসকোর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রংপুর বিভাগের আট জেলায় দিন–রাতে বিদ্যুতের চাহিদা ৯০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ৪৫০ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে অর্ধেক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে এলাকাভেদে লোডশেডিংয়ের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তবে নানা কারণে সেটিও রক্ষা করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। বিষয়টি সমন্বয়ের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।