ভাষাবিদ মাহবুবুল হকের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম নগরের জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে
ভাষাবিদ মাহবুবুল হকের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম নগরের জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে

‘মাহবুবুল হক ছিলেন সবার মানুষ’

‘মানুষ এখন অত্যন্ত আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। অনেক ভালো ছাত্র শুধু নিজের মধ্যে গণ্ডিবদ্ধ থাকেন। কিন্তু মাহবুবুল হক ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি ছিলেন সবার মানুষ। তিনি সবাইকে নিয়েই ভাবতেন। সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন।’

একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাবিদ মাহবুবুল হকের প্রতি অন্তিম শ্রদ্ধা জানাতে এসে এসব কথা বলেন কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক আবুল মোমেন। চট্টগ্রাম নগরের শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় এ শ্রদ্ধা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাহবুবুল হকের মরদেহ সেখানে রাখা হয়। এতে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন শিক্ষাবিদ, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা।

শ্রদ্ধা অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণা করে একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ অত্যন্ত কৃতী একজন গবেষককে হারিয়েছে। আমরা মাহবুব ভাইকে হারিয়েছি। এই অপূরণীয় ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়। বিশেষ করে বাংলা ভাষার বানানরীতিতে তিনি যে অবদান রেখেছেন, এটা তাঁকে বাংলাদেশের ইতিহাসে, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটা চিরস্থায়ী সম্মান সব সময় দেবে।’

ড. মাহবুবুল হক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আবু তাহের বলেন, ‘মাহবুবুল হক বাংলার শিক্ষক ছিলেন। তবে ইংরেজিতেও তাঁর পাণ্ডিত্য অসাধরণ। তাঁর কাছ থেকে হাতে-কলমে অনেক কিছু শিখেছিলাম। তাঁকে আমরা হারিয়েছি। দেশ ও জাতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়।’

বাবার স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে মাহবুবুল হকের মেয়ে উপমা মাহবুব বলেন, ‘আমাদের দেশটা ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আপনারা সবাই যেখানে যাঁরা আছেন, দেশের জন্য কাজ করুন। তরুণদের জন্য আরও কাজ করুন। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আরও সুন্দরভাবে কীভাবে তৈরি করা যায়, সেভাবে কাজ করবেন, যাতে আমার বাবা যেমন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন, তেমন বাংলাদেশ পেতে পারি।’

কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসানের সঞ্চালনায় এতে শোক প্রকাশ করে আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) বেনু কুমার দে, সহ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) মো. সেকান্দর চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা শাখা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি অশোক সাহা, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, জেলা শিল্পকলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম প্রমুখ।

শ্রদ্ধা অনুষ্ঠান শেষে মাহবুবুল হকের মরদেহ নেওয়া হয় নগরের জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদে। পরে নগরের জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদে এই ভাষাবিদকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। বাদ জুমা জানাজা শেষে সেখান থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হয়। আসরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালের কেন্দ্রীয় মসজিদেও জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে মসজিদের পাশে কেন্দ্রীয় কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় এই গবেষককে।

বুধবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন খ্যাতিমান ভাষাবিদ মাহবুবুল হক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্‌রোগ ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রবন্ধ রচনা, ফোকলোর চর্চা, গবেষণা, অনুবাদ, অভিধান, সম্পাদনা ও পাঠ্যবই রচনার জন্য দেশ-বিদেশে পরিচিতি লাভ করেছেন।