আট বছরের ব্যবধানে ঈমান আলীকে (৬৩) পাঁচবার তিস্তা নদীর ভাঙনের কারণে বসতভিটা সরিয়ে নিতে হয়েছে। এই কয়েক বছরে তাঁর প্রায় সাত একর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন তাঁর কোনো আবাদি জমি নেই। নতুন করে নদীর ভাঙন দেখা দেওয়ায় ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যের জমিতে বসত গড়তে ছুটে যাচ্ছেন।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের চরগনাই এলাকার বাসিন্দা ঈমান আলী। শুধু তিনি নন, নদীভাঙনে এই এলাকার নিঃস্ব হয়ে যাওয়া এমন অনেকেই অন্য স্থানে ঠাঁই নিতে যাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে কারই নিজের জমি নেই, যেখানে তাঁরা নতুন করে বসতি গড়বেন। এরপরও টিনের ঘর রক্ষায় ছুটে চলেছেন পরিচিত এলাকাবাসীর কাছে।
‘নদীর ভাঙোনোত হামরা শেষ হয়া গেইনো (গেলাম)। এবার কোনোটে জায়গা পাইতোছি (পাচ্ছি) না। তার ওপর পরিবারে পাঁচজন খাওয়াইয়া।’মমিনুল ইসলাম, স্থানীয় কৃষক
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় তিস্তা নদীর ভাঙন তীব্র হচ্ছে। নতুন নতুন এলাকা ভাঙছে। ভাঙছে বসতভিটা ও আবাদি জমি। উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের চরগনাই এলাকায় শতাধিক পরিবার ভাঙনের মুখে পড়েছে। এরই মধ্যে অনেকের বসতভিটা ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
টেপামধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম বলেন, ভাঙনের কারণে মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। তবে ভাঙনকবলিত এলাকার প্রতিটি পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। নতুন করে ঘর নির্মাণের টাকা বরাদ্দ না থাকায় দেওয়া সম্ভব হয়নি।
আজ বুধবার সকালে ভাঙনকবলিত এলাকায় গিয়ে তিস্তা নদীর ভাঙনের চিত্র চোখে পড়ে। আলাপকালে স্থানীয় লোকজন জানান, এক মাসের বেশি সময় ধরে এবার তিস্তা নদীর পানি বাড়া-কমার মধ্যে আছে। নদীর পানি পাড়ে এসে ধাক্কা লেগে পাড় ভেঙে যাচ্ছে। ভাঙনের কবলে পড়ে উপায় না পেয়ে তাঁরা বসতভিটা ভেঙে অন্য স্থানে নিচ্ছেন।
স্থানীয় কৃষক মমিনুল ইসলামের তিন বছর আগেও প্রায় দুই একর আবাদি জমি ছিল। এখন তাঁর কোনো জমি নেই। এখানে-ওখানে কাজ করে সংসার চলে। চারটি টিনের ঘরের মধ্যে দুটি ঘর ইতিমধ্যে অন্য একজনের জমিতে নিয়ে গেছেন। এখন আরও দুটি ঘর সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। মমিনুল বলেন, ‘নদীর ভাঙোনোত হামরা শেষ হয়া গেইনো (গেলাম)। এবার কোনোটে জায়গা পাইতোছি (পাচ্ছি) না। তার ওপর পরিবারে পাঁচজন খাওয়াইয়া।’
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে চরগনাই গ্রামে প্রায় ৫০০ পরিবারের বসবাস। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় নতুন করে এই এলাকা ভাঙতে শুরু করেছে। একের পর এক আবাদি জমি ভেঙেই চলেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রংপুর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। এ নিয়ে গ্রহণ করা হয়েছে একটি মহাপরিকল্পনা।
চরগনাই গ্রামের কৃষক আজগর আলী ও সুলতান মিয়া ঘর ভেঙে একটু দূরে নিয়ে গেছেন। কিন্তু ঘরবাড়ি তুলতে অর্থ না থাকায় তাঁরা এখনো ঘর তুলে ঠাঁই নিতে পারেননি। আজগর বলেন, ‘নদীর যা ভাঙন শুরু হইছে, তাতে করি মনে হয়, গ্রামটা এবার টিকপার নয়।’