পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা শহরের তেঁতুলতলায় গতকাল বুধবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের’ সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা শহরের তেঁতুলতলায় গতকাল বুধবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের’ সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম

অভ্যুত্থানের তিন মাস পর তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কিছু হতাশা-ক্ষোভ দেখতে পাচ্ছি : হাসনাত আবদুল্লাহ

অভ্যুত্থানের তিন মাস পর তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কিছু হতাশা ও ক্ষোভ দেখতে পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, ‘আমরা পঞ্চগড়ের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়েছি, তাদের (শিক্ষার্থীদের) সঙ্গে কথা বলেছি এবং তরুণ প্রজন্মের যে চিন্তা এবং ভাষা, সেই ভাষার সঙ্গে সংযোগ ঘটানোর চেষ্টা করেছি। অভ্যুত্থানের তিন মাস পরে এসে আমরা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কিছু হতাশা দেখতে পাচ্ছি, কিছু ক্ষোভ দেখতে পাচ্ছি।’

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা শহরের তেঁতুলতলায় গতকাল বুধবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আবদুল্লাহ এসব কথা বলেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের’ সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলমসহ পঞ্চগড় জেলার সমন্বয়কেরা উপস্থিত ছিলেন। সারা দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো এবং সবার কথা শোনার অংশ হিসেবে উপজেলা পর্যায়ে তেঁতুলিয়া থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে তাঁরা সংবাদ সম্মেলনে জানান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের একটি মন্তব্যের বিষয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘মির্জা আব্বাস সাহেবেকে বলতে চাই, আমার বয়স হচ্ছে ২৬ বছর, আমার বাবার বয়স হচ্ছে ৫২ বছর। উনি (মির্জা আব্বাসের) রাজনীতি করেন অন্তত ৫৫ বছর ধরে। অর্থাৎ আমার বাবার থেকে বেশি বয়সের উনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। উনার জায়গা থেকে উনাদের যে ত্যাগ এবং এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাতের ক্ষেত্রে বিএনপির যে সমন্বিত ত্যাগ, সেটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। উনাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, মির্জা আব্বাস সাহেবের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, আপনাদের এই কটাক্ষমূল যে বক্তব্যগুলো, সেগুলো কিন্তু আমাদের প্রজন্মভিত্তিক যে কনফ্লিক্ট, জেনারেশন কনফ্লিক্ট কিন্তু ক্রিয়েট করছে। আমাদের তরুণ প্রজন্মের ৫ আগস্টে যে অবদান রয়েছে, সেটাকে কিন্তু কটাক্ষ করা হয়।’

বিএনপিকে উদ্দেশ করে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আপনাদের ভুলে গেলে চলবে না ৫ আগস্টের পূর্বে গত ১৬ বছর আপনাদের সাংবিধানিক অধিকার, মৌলিক-মানিবক অধিকার থেকে ফ্যাসিস্ট সরকার আপনাদের বঞ্চিত করেছে। আপনাদের দলীয় প্রধান খালেদা জিয়াকে ন্যূনতম চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে দেয়নি। ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যায় আচরণ যখন সর্বোচ্চ মাত্রায় চলে যায়, তখন কিন্তু বাবার আগে সন্তানেরাই রাস্তায় নেমে আসে। তখন সন্তানেরাই কিন্তু বুক চেতিয়ে দেয়। আপনারা যাঁরা বাবা রয়েছেন, সন্তানদের পেছনেই কিন্তু এই গণ–অভ্যুত্থান করেছেন। আমরা দেখেছি, গণ–অভ্যুত্থানের পরে আপনিই (মির্জা আব্বাস) কিন্তু সংবাদ সম্মেলনের পর কেঁদে কেঁদে আপনাদের অসহায়ত্ব বলেছেন। আপনাদের সম্মান রেখেই বলছি, বাবা যখন বার্ধক্যে পৌঁছে যায়, তখন কিন্তু সন্তানের কাঁধে হাত রেখেই তাঁর বাকিটা পথ চলতে হয়। সুতরাং এই তরুণ প্রজন্মের অবদান ভুলে গিয়ে যদি আপনারা তাদের কটাক্ষ করেন, তাহলে সেটি তরুণ প্রজন্মকে আশাহত করে।’

বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। আপনারা বলছেন যে আওয়ামী লীগকে নিয়ে আপনারা নির্বাচনে যেতে চান। আপনার একবার ভেবে দেখেন, ওয়াশিম যদি বেঁচে থাকত, আপনারা এই সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন কি না। তাদের (আওয়ামী লীগ) বিচার নিশ্চিত হওয়ার পূর্বে তাদের কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রমে আহ্বান জানান, তাহলে এই চব্বিশের অভ্যুত্থানে যাঁরা রক্ত দিয়েছেন, সেই রক্তের সঙ্গে আপনারা বেইমানি করবেন।’

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন বিষয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে দেখছি ‘খুনি’ শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার সময় যে এতিম সন্তানদের রেখে গেছেন, তাঁদের মধ্যে একধরনের খুশির আমেজ বিরাজ করছে। আমরা বলতে চাই, আমেরিকায় কে নির্বাচিত হলো, তা দিয়ে বাংলাদেশের পলিসি নির্ধারণ হবে না। বাংলাদেশের পলিসি নির্ধারিত হবে ওয়াশিমের রক্ত, মুগ্ধের রক্ত আর আবু সাঈদের রক্তের যে দায়টি রয়েছে, সেই দায়ের ওপর ভিত্তি করে। এখানে মোদির প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশ চলবে না। বাংলাদেশ চলবে বাংলাদেশের ছাত্র-নাগরিকের প্রেসক্রিপশনে।’