বিক্ষোভকারীরা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর করে আগুন দেয়। রোববার দুপুরে
বিক্ষোভকারীরা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর করে আগুন দেয়। রোববার দুপুরে

কিশোরগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত ৫, আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন

কিশোরগঞ্জে বিক্ষোভকারী, পুলিশ ও ছাত্রলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই গুলিবিদ্ধ।

এদিকে বিক্ষোভ চলাকালে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলামের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়াল এলাকার দিলু মিয়ার ছেলে ও যুবলীগ কর্মী মো. মবিন মিয়া (৩২), সদরের যশোদল বীরদাম পাড়া এলাকার অঞ্জনা বেগম (৩৫), জেলা শহরের নিউ টাউন এলাকার জুয়েল মিয়া (৩০), শহরের কালিবাড়ি এলাকার একটি মোটর পার্টসের দোকানের মালিক মো. আব্দুল্লাহ (৩৫) ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলামের বাড়ির দারোয়ান জুলকার মিয়া।

নিহত মবিনের চাচাতো ভাই আলাল মিয়া বলেন, সংঘর্ষ চলাকালে দুপুর ১২টার দিকে শহরের খড়মপট্টি এলাকায় বিক্ষোভকারীদের পিটুনিতে গুরুতর আহত হন মবিন। সদরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

অঞ্জনা বেগম ও জুলকার মিয়া আগুনে পুড়ে মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেন সদর জেনারেল হাসপাতালের উপপরিচালক একরাম উল্লাহ। খড়মপট্টি এলাকায় সৈয়দ আশফাকুল ইসলামের বাসায় আগুন ধরিয়ে দিলে তাঁরা দুজন আগুনে দগ্ধ হন। তাঁদের সদর হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন। অন্যদিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জুয়েল মিয়াকে শহরের শোলাকিয়া এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান বলে নিশ্চিত করেন নিহত জুয়েলের প্রতিবেশী আলম মিয়া।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেলা ১১টার দিকে শহরের স্টেশন রোডের পুরান থানা এলাকা থেকে মিছিল শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। মিছিলটি কিছুদূর এগোলেই আগে থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রস্তুত থাকা ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের মুখোমুখি হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ধাওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা পালিয়ে যান। পরে বিক্ষোভকারীরা স্টেশন রোডের আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর দলীয় কার্যালয়ের অদূরে খড়মপট্টি এলাকায় সৈয়দ আশফাকুল ইসলামের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেন। এ সময় কয়েকটি গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়। পরে বিক্ষোভকারীরা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মিছিল করেন। এভাবে ঘণ্টাব্যাপী পুরো শহরে আধিপত্য বিস্তার করে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে পুরান থানা এলাকার পুলিশ বক্স ভাঙচুর করা হয়। এ সময় ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের কোনো নেতা–কর্মীকে দেখা যায়নি। পুলিশও আন্দোলনকারীদের বাধা না দিয়ে মডেল থানার সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। এ সময় হাতে হাত রেখে প্রাচীর বানিয়ে পুলিশ ও থানাকে রক্ষা করতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের। কেউ কেউ পুলিশকে লক্ষ্য করে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেন।

বেলা একটার পর থানা প্রাঙ্গণে ইটপাটকেল নিক্ষেপকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিপুল পরিমাণ কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। শহরের গৌরাঙ্গ বাজার, পুরান থানা এলাকা, আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের আশপাশ, থানা–সংলগ্ন এলাকা, কালীবাড়ি ও খড়মপট্টি এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কয়েক ঘণ্টা ধরে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। আহত ব্যক্তিদের কিশোরগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতাল ও শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে মো. আব্দুল্লাহ মারা যান।

এ ছাড়া জেলার করিমগঞ্জ, নিকলী, পাকুন্দিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাসহ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে কথা বলতে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের মুঠোফোনে চেষ্টা করলে তাঁরা ফোন ধরেননি।