ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়া দুই নেতাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। নির্দেশনা অনুসারে দলীয় নেতা-কর্মীরাও সেভাবে কাজ করছেন। এ ছাড়া কসবা উপজেলায় আইনমন্ত্রীর ফুফাতো ভাই ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভাতিজা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। এসব নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। তাঁরা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
২১ মে দ্বিতীয় ধাপে কসবা ও আখাউড়ায় এবং ২৯ মে তৃতীয় ধাপে বাঞ্ছারামপুর ও আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দলীয় নেতা-কর্মীরা বলেন, আখাউড়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মুরাদ হোসেন ভূঁইয়াকে (আনারস) দলীয় প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। বাঞ্ছারামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলামকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। অথচ কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে দলের পক্ষ থেকে সমর্থন দেওয়া যাবে না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনের সংসদ সদস্য তাজুল ইসলামের ভাতিজা ও ছয়ফুল্লাহকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। তিনি এ জন্য ছয়ফুল্লাহকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
কসবা উপজেলায় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ফুফাতো ভাই কুটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ছাইদুর রহমানও চেয়ারম্যান প্রার্থী (কাপ-পিরিচ)। এ আসনে আইনমন্ত্রীর সাবেক সহকারী ব্যক্তিগত সচিব (এপিএস), বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল কাউসার ভূঁইয়া (আনারস) এবারও প্রার্থী হয়েছেন।
জানা গেছে, আখউড়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে মুরাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন (ঘোড়া)। আরেক প্রার্থী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শেখ বোরহান উদ্দিন (দোয়াত-কলম) নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা মুরাদকে সমর্থন দিয়েছেন।
আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী মুরাদ হোসেনের পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র তাকজিল খলিফাসহ অন্যরা। দলীয়ভাবে তাঁকে সমর্থনও দেওয়া হয়েছে। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় ব্যবহার করে তাঁরা মুরাদের পক্ষে সভা করছেন। বিভিন্ন প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। ৩ মে বিকেলে ও ৫ মে দুপুরে আখাউড়া পৌরসভার কার্যালয়ের মুরাদ হোসেনের পরিচয় ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন। সভায় দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মুরাদকে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়ে ঐক্যবদ্ধ থেকে মুরাদকে জয়ী করার জন্য কাজ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে তাকজিল খলিফাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
সমর্থনের বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মুরাদকে সমর্থন দিয়েছি। আমরা দলীয়ভাবে কারও পক্ষে থাকতেই পারি এবং সমর্থন দিতে পারি।’
ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মনির হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী মুরাদ হোসেন ও তাঁর সমর্থকেরা নির্বাচনী আচরণবিধি তোয়াক্কা না করে প্রচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি নির্দলীয় এই ভোটে মুরাদকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌর মেয়র তাকজিল খলিফা। তাঁরা নানাভাবে ভোটারদের প্রভাবিত করছেন এবং ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। দলের কেউ মুরাদের পক্ষে কাজ না করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মুরাদের পক্ষে কাজ করলে স্থানীয় ইউপি সদস্যদের টিআর বরাদ্দ দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। চেয়ারম্যান প্রার্থী মুরাদকে ঢালাওভাবে আইনমন্ত্রীর প্রার্থী বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এসব কারণে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা বিরাজ করছে।
চেয়ারম্যান প্রার্থী মুরাদ হোসেন বলেন, ‘তিনি (মনির) তাঁর নির্বাচন করছেন, আমি আমার। সরকারি স্থাপনা ব্যবহারের বিষয়ে কারণ দর্শানোর জবাব দেওয়া হয়েছে। তাঁর (মনির) অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’
আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা বলেন, মনির চেয়ারম্যান প্রার্থী। তিনি অনেক কথাই বলতে পারেন। তাঁর সব কথা তো আর সঠিক হবে না। তাঁর অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য তাজুল ইসলামের আপন ভাতিজা আমিনুল ইসলাম চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেও দলের উপজেলা সভাপতি ও আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী সিরাজুল ইসলামের পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছেন দলের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সিরাজুলের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় বসে দলের উপজেলা সভাপতিকে দলীয়ভাবে সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। পরে উপজেলার নেতারা বিষয়টি নিয়ে সংসদ সদস্য তাজুল ইসলামকে দায়িত্ব দেন। সংসদ সদস্য তাঁদের চেয়ারম্যান পদে সভাপতিকে জয়ী করার জন্য কাজ করতে বলেছেন।
আমিনুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার জন্য নির্বাচন উন্মুক্ত করেছেন। সেখানে কীভাবে তাঁরা একজন প্রার্থীকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিতে পারেন? শুধু তা–ই না, প্রতীক বরাদ্দ এখনো হয়নি। এর আগেই তাঁরা সভা ও মিছিল করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। আগামীকাল প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। এর আগেই তাঁরা প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। এদিকে তাঁদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। তাঁদের কিছু কর্মী-সমর্থককে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হয়েছে। প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন তাঁরা। তাই সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কায় আছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী বলেন, ‘আমি যত দূর জানি, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য কাউকে একক প্রার্থী ও দলের প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন, যা ঠিক না। আপনারা খোঁজ নেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নির্বাচনে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করেছে। দলের এই নির্দেশনা সকলেরই মানা উচিত। আমরা কাউকে সমর্থন দিচ্ছি না।’