সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত জেলা জামায়াতের কর্মী সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দলের আমির শফিকুর রহমান। আজ শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত জেলা জামায়াতের কর্মী সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দলের আমির শফিকুর রহমান। আজ শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

নারীদের কাজের সুযোগ প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বললেন, ‘তাঁদের হাত বন্ধ করার আমরা কে’

জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে নারীদের ঘর থেকে বের হতে দেবে না বলে অপপ্রচার চালানো হয় বলে উল্লেখ করেছেন দলের আমির শফিকুর রহমান। নারীদের কাজের সুযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাঁদের হাত বন্ধ করার আমরা কে’।

আজ শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত জেলা জামায়াতের কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমির এসব কথা বলেন।

নারীদের বিষয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা এমন একটি দেশ চাই, যেখানে আমাদের মা-বোনেরা ঘরে সুরক্ষিত থাকবেন, কর্মস্থলে সুরক্ষা পাবেন, রাস্তাঘাটেও সুরক্ষিত থাকবেন। তাঁদের দিকে কোনো খারাপ লোক চোখ তুলে তাকানোর ফুরসত পাবে না। তাঁরা ইজ্জতের সঙ্গে, মর্যাদার সঙ্গে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন।’

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মানবজীবনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নারীদের শরিক করেছেন উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘কাজটি হলো যুদ্ধ। মায়েরা পুরুষের পাশে থেকে যুদ্ধ করেছেন।’

একটি যুদ্ধের উদাহরণ দিয়ে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘যখন কাফেররা আল্লাহর রাসুলের খুব কাছে চলে এসেছিল, যখন পুরুষ যোদ্ধারা কিছুটা দিগ্‌বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন, তখন একজন মা চতুর্দিকে ঘুরে ঘুরে আল্লাহর রাসুলকে বেষ্টনী দিয়ে রেখেছিলেন। যুদ্ধ শেষের পর তাঁর শরীরে ৩৭টি তির ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল, ৭০টি কঠিন আঘাত ছিল। রসুলে করিম বলেছিলেন, শত্রুর তির ও তাঁর মাঝখানে ছিলেন আল্লাহর ওই বান্দী। সেই মর্যাদাবান নারীর নাম ছিল হজরতে নুসাইবা (রা.)।’

জামায়াতের আমির বলেন, ‘যুদ্ধের এই কঠিন ময়দানে আল্লাহর রাসুল যদি নারীদের জন্য কর্মক্ষেত্র তৈরি করে দিয়ে থাকেন, তাহলে আমরা কে তাদের হাত বন্ধ করার।’

জামায়াতের আমির আরও বলেন, ‘আমাদের ব্যাপারে ইসলামের প্রতিপক্ষ শক্তিরা অপপ্রচার চালায়। বলে, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে মহিলাদের ঘর থেকে বের হতে দেবে না। যদিও দেয়ও, জোর করে বোরকা পরাবে।’ তিনি বলেন, ‘জোর করা লাগবে না। যে দেশে ইসলাম কায়েম হবে, সে দেশে মায়েরা আনন্দের সঙ্গে তাঁদের সম্মানের ও মর্যাদার পোশাক পরবেন। তারপরও কোনো মা, কোনোও বোন যদি এই পোশাকের বাইরে থাকেন, আমরা কথা দিচ্ছি, নিশ্চয়তা দিচ্ছি, কারও ওপর জোর খাটানো হবে না। কারণ, এই দেশে শুধু মুসলমানেরা বসবাস করেন না। অন্য ধর্মের লোকেরাও বসবাস করেন।’ তিনি বলেন, ‘তাঁরা (অন্য ধর্মাবলম্বীরা) যেহেতু আমাদের ধর্ম গ্রহণ করেননি, তাঁদের জন্য ইসলামের প্রেসক্রাইব (নির্দেশিত) করা পর্দা প্রযোজ্য নয়।’

জামায়াতের আমির বলেন, ‘তাঁরা (অন্য ধর্মাবলম্বীরা) যদি ইসলামের সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন, সেটা ভিন্ন কথা। ইসলাম গ্রহণের জন্য কাউকে বাধ্য করা হবে না।’

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়েও বক্তব্য দেন জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি দেশ চাই, যেখানে মসজিদ যেমন পাহারা দেওয়া লাগবে না, তেমনি মন্দির, গির্জাও পাহারা দেওয়া লাগবে না। সকল ধর্মের লোকেরা তাদের আপন ধর্ম শান্তিতে পালন করবে।’

‘আমাদের দেশটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি চমৎকার বাগান। কিন্তু বাগানে মাঝে মাঝে হুতুম প্যাঁচা ঢুকে পড়ে। হুতুম প্যাঁচাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা সম্প্রীতি রক্ষা করতে চাই’, বলেন জামায়াতের আমির।

কর্মী সম্মেলনে আরও নানা বিষয়ে কথা বলেন জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বলে জিকির করেছে বিগত সরকার। অথচ আমি একটি মোটরসাইকেলে করে ঘুরে দেখলাম সাতক্ষীরার রাস্তাঘাটে চলা যায় না। সব রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরা। শাসকগোষ্ঠী সাতক্ষীরাকে বাংলাদেশের অংশ মনে করেনি। যে কারণে সাতক্ষীরায় কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। তিনি বলেন, গত ১৭ বছরে সাতক্ষীরার মানুষ সবচেয়ে বেশি অত্যাচারের শিকার হয়েছে।

কর্মী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির উপাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম। সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আজিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা ইজ্জত উল্লাহ, সাংগঠনিক সেক্রেটারি মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, মুহাদ্দিস রবিউল বাসার, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির শেখ নূরুল হুদা প্রমুখ।