ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচন

প্রতীক পেলেন ৫ প্রার্থী, সাত্তারের সঙ্গে নেই বিএনপির পদবঞ্চিতরা

আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া
ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে দলীয় দুজনসহ পাঁচ প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার বিকেলে জেলা প্রশাসক ও এ আসনের উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাগীর আলমের দপ্তর থেকে তাঁদের মধ্যে প্রতীক দেওয়া হয়।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও এ আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আজ পাঁচজনের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন।

পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া পেয়েছেন ডাব প্রতীক, সিংহ প্রতীক পেয়েছেন জাতীয় পার্টির দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য আইনজীবী জিয়াউল হক মৃধা, আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ পেয়েছেন মোটরগাড়ি প্রতীক। দলীয় প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির (জাপার) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সহাসচিব আইনজীবী আবদুল হামিদ ভাসানী পেয়েছেন লাঙল প্রতীক এবং জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম পেয়েছেন গোলাপ ফুল প্রতীক।

উপনির্বাচনে অংশ নিতে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। ৮ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছায়ের পর পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। বৈধ ঘোষিত আট প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী দলীয় সিদ্ধান্তে তাঁদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান আলম।

এখনো সাত্তারের দেখা মেলেনি

মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, জমা দেওয়া, যাচাই–বাছাই প্রক্রিয়া এবং প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া পর্যন্ত প্রক্রিয়ায় বহুল আলোচিত বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া অংশ নেননি। তাঁর ছেলে মাঈনুল হাসান ভূঁইয়া এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। আজ মাঈনুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আব্বু ঢাকায় আছেন, সুস্থ আছেন। আজ প্রতীক পেয়েছি। আগামী বুধবার থেকে প্রচারণায় নামবেন।’ এর আগে তিনি একাধিকবার বলেছিলেন, ‘৫ জানুয়ারির পর, ৮ জানুয়ারির পর আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া মাঠে নামবেন।’ তবে এখন পর্যন্ত তাঁকে মাঠে দেখা যায়নি। তিনি অসুস্থ বলেই প্রচার রয়েছে।

আবদুস সাত্তারের সঙ্গে নেই বিএনপির সাবেক নেতারা

৫ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় সরাইল উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের সাবেক কমিটির (বর্তমানে পদবঞ্চিত) অনেক নেতা-কর্মী মাঈনুল হাসানের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সাত্তারের সঙ্গে থাকার প্রত্যয় ঘোষণা করেছিলেন। দল ত্যাগের পর তাঁদের অনেকেই ঢাকার বাসায় গিয়ে সাত্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এখন তাঁরা কেউ সাত্তারের সঙ্গে নেই।
তবে মাঈনুল হাসান আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সাবেক কমিটির সব নেতা–কর্মী সাত্তার সাহেবের সঙ্গে আছেন। কারণ, তাঁদের পদ হারানোর ভয় নেই। এমনকি পদে আছে এমন অনেক নেতা-কর্মীও আমাদের সঙ্গে আছেন। তাঁরা গোপনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তাঁরা কাজও করবেন।’

উপজেলা বিএনপির ৩০ বছরের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আইনজীবী আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (সাত্তার) এখন দলের কেউ না। তাঁর নির্বাচন করার প্রশ্নই আসে না। আমরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারি না।’

সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা এখন পদে নেই। কিন্তু আমরা তো বহিষ্কৃত না। তিনি (সাত্তার) বহিষ্কৃত নেতা। তাঁর সঙ্গে আমরা নেই।’
উপজেলা যুবদলের সাবেক কমিটির সভাপতি নাজমুল আলম খন্দকার ও সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন ভূঁইয়া জানিয়েছেন, তাঁরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কারও নির্বাচন করতে পারেন না।

উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সৈয়দ ইসমাইল হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সদর ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (সাত্তার) দলের কেউ না। তাঁর নির্বাচন করার সুযোগ নেই। আমরা দলীয় সিদ্ধান্তের বইরে যাব না।’  

বিএনপির আন্তর্জাতিক–বিষয়ক সহসম্পাদক ও দলটির সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা গত রোববার আশুগঞ্জে দলীয় এক সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বরাত দিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন, যাঁরা সাত্তারের পক্ষে কাজ করবেন, তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিজয়ী হয়েছিলেন। গত ১১ ডিসেম্বর তিনি জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য হয়। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।