ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। আজ বেলা দুইটায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে
ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। আজ বেলা দুইটায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে

রামদা, লাঠিসোঁটা নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় রামদা ও লাঠিসোঁটা হাতে একে অপরকে ধাওয়া দেন। আগের দিন বুধবার রাতেও এই দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে।

বিবদমান এ দুটি পক্ষ বিজয় ও সিক্সটি নাইন নামে পরিচিত। এর মধ্যে বিজয় শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও সিক্সটি নাইন সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমানে কোনো কমিটি নেই। নিজেদের মধ্যে বারবার সংঘর্ষ, ঠিকাদার, কর্মকর্তাদের থেকে চাঁদাবাজি ও সাংবাদিক মারধরের ঘটনার পর গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্র।

ছাত্রলীগের আহত কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। জানতে চাইলে চিকিৎসাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাতজনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে সেলাই লেগেছে। তাঁদের শরীরে ইটপাটকেল নিক্ষেপের আঘাতের চিহ্ন ছিল। চারজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

যে বিরোধ থেকে সংঘর্ষ
ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, বিজয় পক্ষের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের কামরুল ইসলাম ২০১৯ সালের দিকে সিক্সটি নাইনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে তিনি বিজয় পক্ষে যুক্ত হন। এ নিয়ে সিক্সটি নাইন পক্ষের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের কর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই কামরুলের বিরোধ চলে আসছে। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে গত রোববার কামরুলকে মারধর করেন সিক্সটি নাইনের কর্মীরা।

গতকাল বুধবার রাতে সোহরাওয়ার্দী হলের দিকে সিক্সটি নাইন পক্ষের এক কর্মী রাতের খাবার খেতে এলে কামরুলের সঙ্গে তাঁর হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বিজয়ের কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে আর সিক্সটি নাইনের কর্মীরা শাহজালাল হলের সামনে অবস্থান নেন।

পরে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এ সময় দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরাই একে অপরের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে রাত সাড়ে ১১টায় প্রক্টরিয়াল বডি পুলিশ নিয়ে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে দুই পক্ষের নেতা–কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা কমেনি।

ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় রাম দা ও লাঠিসোঁটা হাতে অবস্থান নেন নেতা–কর্মীরা। আজ বেলা দুইটায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে

এ ঘটনার রেশ ধরে আজ দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে একটি পিঠা উৎসবে বিজয় পক্ষের ছয়জন কর্মীকে পেয়ে মারধর করেন সিক্সটি নাইনের কর্মীরা। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বিজয়ের নেতারা লাঠিসোঁটা ও রামদা নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে অবস্থান নেন। আর সিক্সটি নাইনের নেতা-কর্মীরা শাহজালাল হলের সামনে অবস্থান নেন। পরে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হন। পরে আড়াইটার দিকে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। গতকালের ঘটনার রেশ ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এখন দুই পক্ষকেই হলে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ। আজ বেলা দুইটায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে

সংঘর্ষের এ ঘটনায় দুই পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করছে। বিজয় পক্ষের নেতা শাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সিক্সটি নাইনের নেতারা শহর থেকে বহিরাগত নিয়ে এসে হামলা করেছে। এতে তাঁদের বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন।

সিক্সটি নাইন নেতা শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম  প্রথম আলোকে বলেন, বিজয়ের এ পক্ষটি সবার সঙ্গেই ঝামেলা করে। কারণ এ পক্ষের মধ্যে শিবিরের নেতা-কর্মীদের অনুপ্রবেশ রয়েছে। শাখা ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।

তুচ্ছ ঘটনাকে নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষের ঘটনা নতুন নয়। গত পাঁচ বছরে কথা-কাটাকাটি, কক্ষ দখল, পূর্ববিরোধ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অন্তত ১৬২ বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন চার শতাধিক নেতা-কর্মী।