ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা ঠেকাতে গাজীপুরের টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন ‘শুরায়ে নেজাম’ বা মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা। আজ রোববার বিকেলে ইজতেমা মাঠ-সংলগ্ন কামারপাড়া সড়কে আয়োজিত এক সমাবেশে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
সমাবেশের প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ওই ঘোষণা দেন। মামুনুল হক বলেন, ‘মুরব্বিদের পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেই অনুযায়ী আমরা টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে অবস্থান নিলাম। ইজতেমার জন্য সরকারিভাবে যে তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে, ওই তারিখের পূর্বে যদি কেউ আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে কোনোরকম বাধার সৃষ্টি করতে চায়, তবে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য খোদা বকশ চৌধুরী (প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী), নাজমুল করিমসহ (গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার) তাঁদের দোসররাই দায়ী থাকবেন। আমরা একবার ২০১৮-তে রক্ত দিয়েছি, আবার দেব। তবু কোনো অবস্থাতেই আত্মমর্যাদার পথ থেকে এক চুল পরিমাণ সরে দাঁড়াব না।’
মামুনুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের ওলামায়ে কেরাম মালিকানা সূত্রে এ দেশে বসবাস করে। আলেম সমাজকে মাইনাস করে বাংলাদেশে কোনো কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না। আমরা আবার বলছি, শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সকল কার্যক্রম চলবে। বিশ্ব ইজতেমা যেভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেভাবেই চলবে। আপনারা হুঁশিয়ার হয়ে যান, প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে থেকে যারা ইসলামকে, আলেম সমাজকে ঘায়েল করতে চান, আমরা আপনাদের কোনো ষড়যন্ত্র ইনশা আল্লাহ বাস্তবায়িত হতে দেব না।’
মূল ইজতেমাকে সামনে রেখে গত ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইজতেমা মাঠে পাঁচ দিনের ‘জোড়’ পালন করেন জুবায়েরের অনুসারীরা। এরপর ২০ ডিসেম্বর থেকে ৫ দিনের জোড় পালনের ঘোষণা দেন সাদের অনুসারীরা। কিন্তু জুবায়েরের অনুসারীরা সাদের অনুসারীদের ইজতেমা মাঠে ‘জোড়’ করতে দিতে রাজি না। সরকারিভাবেও এর অনুমতি নেই। এ নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে দুই পক্ষের মাঝে উত্তেজনা চলছে। পৃথক মানববন্ধন, বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি, গাড়িতে হামলাসহ নানা ঘটনা ঘটেছে। এমন উত্তেজনার মধ্যে জুবায়েরের অনুসারীদের থেকে ইজতেমা মাঠে অবস্থানের ঘোষণা এল।
আজকের সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুপুরের পর থেকে ইজতেমা মাঠে জড়ো হতে থাকে জুবায়েরের অনুসারী বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্ররা। সাদের অনুসারীরা যাতে কোনোভাবে ইজতেমা মাঠে ঢুকতে না পারে, সে জন্য মাঠের প্রতিটি ফটকে পাহারা বসানো হয়েছে। এর মধ্যে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মাঠ-সংলগ্ন কামারপাড়া সড়কে সমাবেশ হয়।
সমাবেশে মামুনুল হক বলেন, ‘আমরা আলেম সমাজের পক্ষ থেকে উদাত্ত আহ্বান জানাতে চাই, এভাবে মোকাবিলায় না গিয়ে, সংঘাতে না জড়িয়ে, আসো, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করি। ইসলামের যেকোনো কাজ পরিচালনা করতে হলে আলেম সমাজের তত্ত্বাবধান জরুরি, পরামর্শ জরুরি। তাদের পরামর্শের বাইরে ইসলাম ধর্মীয় কোনো কাজ চলতে পারে না।’
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মুফতি আমানুল হক, মুফতি ফজলুল করিম কাসেমী, মাওলানা মাসউদুল করিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
তাবলিগ জামাত দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী, অন্য ভাগে বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়েরের অনুসারী। তাঁদের মধ্যে বিবদমান বিরোধে এবারও বিশ্ব ইজতেমা আলাদাভাবে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্বে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি জুবায়েরের অনুসারীরা এবং চার দিন বিরতি দিয়ে ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইজতেমা করবেন সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা। তার আগে জোড় ইজতেমাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছে।