গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত মশকনিধন অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু সঠিকভাবে অভিযান না চালানোয় মশার উপদ্রব কমেনি।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেলিম শেখ নগরের কাজলা এলাকায় থাকেন। তাঁর এলাকায় এতই মশার উৎপাত যে পড়াশোনাসহ দৈনন্দিন কোনো কাজই ঠিকভাবে করা যায় না। রাত–দিন—সব সময় মশারি টাঙিয়ে রাখতে হয়।
শুধু কাজলা এলাকাতেই নয়, রাজশাহী নগরজুড়ে ফেব্রুয়ারি থেকে মশার উৎপাত বেড়ে গেছে। এ সময়ে মশার প্রজননের সময়। ঘরের ভেতর থেকে শুরু করে, চায়ের দোকান, রাস্তাঘাট, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষসহ সর্বত্র মশার বিচরণ। সন্ধ্যার পর এই উৎপাত আরও বেড়ে যায়। মশার জন্য বাইরে বসা যায় না। এ পরিস্থিতিতে মশার কয়েল, অ্যারোসলসহ বিভিন্ন উপায়ে মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছে মানুষ।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, তাদের মশকনিধন অভিযান শুরু হয়েছে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। মশকনিধন অভিযান চলেছে ১২ মার্চ পর্যন্ত। বছরে দুবার—ফেব্রুয়ারি-মার্চ ও অক্টোবর-নভেম্বর ফগার মেশিন দিয়ে মশকনিধনে অভিযান চালানো হয়। এটা মশার প্রজননের সময়। এ ছাড়া বছরব্যাপী নর্দমার পানিতে মশার লার্ভা ধ্বংসে লার্ভিসাইড দেওয়া হয়।
সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন পাঁচটি ওয়ার্ডে সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে ও বিকেল চারটা থেকে দুই বেলা ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হয়। এ ছাড়া এক দিন কেন্দ্রীয়ভাবে নগরের বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ফগার মেশিন দিয়ে কীটনাশক ছিটানো হয়।
তবে এত কিছু করার পরও মশার উৎপাত কমেনি। শীত শেষে গরম হওয়া শুরু হওয়ার পর মশার উপদ্রব বেড়েছে। এতে বাসাবাড়িতে দিনে-রাতে মশারি ছাড়া থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। নগরবাসী বলছে, মশার যন্ত্রণায় তারা অতিষ্ঠ। মশা তাড়াতে তারা কয়েল জ্বালানো, অ্যারোসলসহ ছিটানোসহ বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করলেও রেহাই পাচ্ছে না।
নগরের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, ‘শীত কমে যাওয়ার পর থেকেই মশা বেড়েছে। রমজান মাসে মশার উৎপাতে টিকে থাকা যায় না। বিছানায় নাহয় মশারি টানানো হয়, বাকি সময় বাইরে কয়েল ধরিয়ে রাখতে হয়। কয়েলের ধোঁয়া ক্ষতিকর।’ তিনি আরও বলেন, কয়েক দিন আগে তার এলাকায় ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হয়, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।
নগরের কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় থাকেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিহাবুল ইসলাম। তিনি বলেন, মশার অতিষ্ঠে পড়াশোনা করতে সমস্যা হচ্ছে। কামড়ের কারণে হাতে–পায়ে লাল লাল গুটি হয়ে গেছে। একটি কয়েলে এক রাত যায়। ভালো একটি কয়েলের দাম ১০ থেকে ১২ টাকা। এর ধোঁয়াও ক্ষতিকর। ড্রেন, নর্দমা পরিষ্কার না করা হলে মশার উৎপাত কমবে না।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন বলেন, তাঁরা সারা বছরই মশকনিধনে কাজ করে থাকেন। এ ছাড়া লার্ভিসাইড (লার্ভা মারার ওষুধ) ছিটানো হয়। তিনি আরও বলেন, ‘ফগার মেশির স্প্রে করে পূর্ণবয়স্ক মশা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই কীটনাশকের ধোঁয়া জিনিসটা ভালো না। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটার অনুমোদন দিয়েছে। তবে লার্ভিসাইডে জোর দেওয়া উচিত। বছরব্যাপী তাঁরা তা–ই করছেন। তবে মশার প্রজনন বন্ধে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাই জানে মশা কোথায় জন্মে, কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সে বিষয়ে সচেতন হলে মশার উৎপাত কমে আসবে।’