মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপে কয়েক দিন ধরে দুপক্ষের লড়াই তীব্রতর হয়েছে। গোলাগুলি, মর্টার শেল, গ্রেনেড-বোমার বিস্ফোরণের পাশাপাশি সেখানকার লোকজনের ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন অবকাঠামোতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কাঁপছে নাফ নদের এপারের টেকনাফ সীমান্ত।
সীমান্তের এপার থেকে দাঁড়িয়ে মংডুর বসতিতে জ্বলতে থাকা আগুনের কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে। মংডুর অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রায় প্রতিদিন সে দেশের সরকারি বাহিনী, সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য ও রোহিঙ্গারা নৌকা নিয়ে নাফ নদ পেরিয়ে বাংলাদেশে (টেকনাফে) অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ তাঁদের ঢুকতে দিচ্ছে না। ফের রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন টেকনাফ সীমান্তের মানুষ।
গতকাল সোমবার টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মংডুতে সংঘাত আরও তীব্র হতে পারে। সরকারি বাহিনী সর্বশক্তি দিয়ে মংডু টাউনটির দখল হয়ে যাওয়া অংশ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বিপরীতে মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থান নিয়েছে সে দেশের নৌবাহিনীর চারটি জাহাজ।
পাশাপাশি মংডুতে সরকারি বাহিনীকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়তে সহযোগিতা দিচ্ছেন স্থানীয় রোহিঙ্গারা। এ কারণে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করে তাঁদের ঘরবাড়ি দখলে নিচ্ছে।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, চার মাসের বেশি সময় ধরে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে আরাকান আর্মি। ইতিমধ্যে রাচিডং-বুচিডং টাউনশিপসহ দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও সেনাবাহিনীর ২০টির বেশি সীমান্তচৌকি, ব্যারাকসহ বিপুল এলাকা দখল করে নিয়েছে। মংডু টাউন ও আশপাশের চারটি গ্রাম সিকদারপাড়া, মগনিপাড়া, সুদাপাড়া, ফয়াজিপাড়া এখনো সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। সেখানে সেনা ও বিজিপির পৃথক দুটি ব্যাটালিয়ন রয়েছে।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, মংডু টাউনশিপসহ চারটি গ্রাম দখলে নিতে কয়েক দিন ধরে সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে আরাকান আর্মি (এএ)। অন্যদিকে দখল হয়ে যাওয়া সীমান্তচৌকি ও ব্যারাক পুনরুদ্ধারে সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে সরকারি বাহিনী। তারা রাতদিন সমানে বিমান হামলা চালিয়ে আরাকান আর্মিকে ঠেকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে প্রায় প্রতিদিন রাখাইন রাজ্য থেকে যুদ্ধফেরত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য ও রোহিঙ্গারা আশ্রয়শিবিরে ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এপিবিএনের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, বিজিবি কোস্টগার্ড সতর্ক থাকায় তা হচ্ছে না।
রাখাইন রাজ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় তার প্রভাব এপারের (উখিয়া-টেকনাফে) রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরেও পড়ছে জানিয়ে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ওপারের কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য কিংবা রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্পে (আশ্রয়শিবিরে) ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ওপারের কাউকে আমরা বাংলাদেশে ঢুকতে দেব না।’
উল্লেখ্য, বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। গত সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।