ভূমিহীন গোলজার আলী ও রোকসানা বেগম দম্পতি। গোলজার একসময় রিকশা চালাতেন। আর তাঁর স্ত্রী বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ করতেন। থাকতেন রংপুর রেলস্টেশন এলাকার বস্তিতে। মাদকের ব্যবসা করে ১৫ বছরের ব্যবধানে করেছেন কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাঁরা কিনেছেন প্রায় ৪২ শতাংশ জমি। একটি ব্যাংকে এই দম্পতির ২০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। চারটি ব্যাংকে তাঁরা নতুন অ্যাকাউন্ট খুলেছেন।
শেষ পর্যন্ত গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের আশরতপুর এলাকার বাসা থেকে গোলজার-রোকসানা দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আজ শুক্রবার রংপুর বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এসব তথ্য জানায়।
মানি লন্ডারিং আইনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক আলী আসলাম হোসেনের করা মামলায় ওই দম্পতিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকালে আলী আসলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সম্পদ আয়ের বৈধ কোনো উৎস দেখাতে না পারায় এই দম্পতির বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হয়েছে। সেই মামলায় দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে সন্ধ্যায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ দম্পতি নগরের আশরতপুর এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। সেখানে তাঁদের দুটি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর দেওয়া হলেও একটি একতলা বাড়িতে বসবাস করছিলেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গোলজার আলী ও রোকসানা দম্পতি মাদক ব্যবসার সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে জড়িত। গোলজার রিকশায় ফেরি করে মাদক ব্যবসা করে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন। সেগুলোর আয়ের কোনো বৈধ উৎস নেই। রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকা থেকে হেরোইন পাচার করে রংপুরের বিভিন্ন এলাকায় খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করতেন গোলজার আলী ও রোকসানা বেগম। মাদক বিক্রি করে তাঁরা ১৫ বছরের ব্যবধানে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ বানিয়েছেন। মাদক বিক্রির জন্য বিভিন্ন সময়ে তাঁদের বিরুদ্ধে রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় দুটি, কোতোয়ালি থানায় সাতটিসহ নয়টি মামলা রয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে নতুন করে মামলা হয়েছে।
আলী আসলাম হোসেন বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রোকসানা ও গোলজার দম্পতির বাড়িতে অভিযান চালাতে গিয়ে কিছু জমি ও ব্যাংকের হিসাবের কাগজপত্র পাওয়া যায়। সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কয়েক কোটি টাকার সম্পদের হিসাব পাওয়া গেছে। রংপুর মেট্রোপলিটন এলাকায় তাঁদের ৪২ শতাংশ জায়গার সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দুটি বহুতল ভবনের ভিত্তি দেওয়া বাড়ির নকশাও পাওয়া গেছে। তাঁরা এসব সম্পদ আয়ের কোনো বৈধ নথিপত্র দেখাতে পারেননি। তাঁদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হয়েছে।
তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল কাদের বলেন, মামলা ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার ওই দম্পতিকে আদালতের মাধ্যমে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রংপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।