ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব নেই সুন্দরবন উপকূলে, রোদ আর মেঘের লুকোচুরি

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব নেই সুন্দরবন উপকূলে। আজ রোববার সকালে খুলনার কয়রার শাকবাড়িয়া নদীতে সুন্দরবন থেকে ভেসে আসা কাঠ ও পাতা সংগ্রহ করছিলেন এক নারী
ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূলবাসী আতঙ্কিত হলেও এর কোনো প্রভাব পড়েনি। নেই বৃষ্টি কিংবা ঝোড়ো বাতাস; উল্টো প্রখর রোদে অতিষ্ঠ জনজীবন।

আজ রোববার সকাল থেকে সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলায় রোদ আর মেঘের লুকোচুরি চলছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিক সময়ের মতো প্রবাহিত হচ্ছে। কোথাও এখন পর্যন্ত বৃষ্টি বা ঝোড়ো হাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। ঘূর্ণিঝড় মোখার জন্য জারি করা আগাম সতর্কসংকেত মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলতে পারেনি।

কয়রা উপজেলার বাসিন্দারা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার খবর শোনার পর তাঁরা আতঙ্কিত ছিলেন। বিশেষ করে যেসব এলাকার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ, সেসব এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বেশি। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদীতে পানি বাড়লে উপকূলের বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। কিন্তু দুই দিন ধরে আবহাওয়া স্বাভাবিক। প্রচণ্ড রোদ আর গরম হলেও সাধারণভাবেই তাঁরা দিন পার করছেন।

সুন্দরবনের বানিয়াখালী ফরেস্ট স্টেশনের পাশের ভ্যানচালক আবুল কালাম বলেন, ‘আমরা অনেক দিন আগে থেকেই শুনি বন্যা হবে। কিন্তু যে গরম আর রোদ, এতে বাইরে বের হতে পারছি না। ভ্যানও চালাতেও কষ্ট হয়। আমাদের এলাকার শাকবাড়িয়া ও কয়রা নদী স্বাভাবিক রয়েছে। আবহাওয়াও ভালো। আকাশে কোনো মেঘ নেই।’

সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায় বলেন, সকাল থেকে সুন্দরবনের আবহাওয়া স্বাভাবিক। এখনো কোনো শঙ্কা সৃষ্টি হয়নি।
আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলেও মোখা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কয়রা উপজেলা প্রশাসন। ১১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, নগদ অর্থ ও প্রয়োজনীয় স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত আছে।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মমিনুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় উপজেলার সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। উপজেলায় একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। সাতটি মেডিকেল দল প্রস্তুত। থানা-পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও কয়েক শ স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কয়রা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসানুল বান্না প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি যখন উপকূল অতিক্রম করবে, তখন সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার বা এর বেশি হতে পারে। হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিও হতে পারে। নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট উঁচু জোয়ার হওয়ার আশঙ্কা আছে। মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।