অবশেষে নানা নাটকীয়তার পরে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন থেকে সরে যেতে হলো চেয়ারম্যান প্রার্থী এম এ মান্নান চৌধুরীকে। মান্নানকে সমর্থন দিয়েছিলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তবে এবার সাইফুজ্জামান নিজের সমর্থন বদল করেছেন। মান্নানের বদলে তিনি গত দুবারের চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরীকে সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দেন। গতকাল মঙ্গলবার রাত নয়টার সময় সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সার্সন রোডের বাসায় বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
বৈঠকে বক্তব্য দেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মান্নান চৌধুরী এবং চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদুল হক চৌধুরী। এতে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের নেতারা।
উপজেলা পরিষদে নির্বাচন করার জন্য এর আগে বটতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন এম এ মান্নান চৌধুরী। নির্বাচনের মাত্র সাত দিন আগে এমন সিদ্ধান্ত হলো।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, এর আগে গত রোববার রাতে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ঢাকার বাসায় আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক হয়। সেখানে মান্নান চৌধুরীকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মান্নান সরে যাওয়ায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের অনুসারী কাজী মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে এককভাবে লড়বেন তৌহিদুল হক চৌধুরী। এমন সিদ্ধান্তের পর সোমবার প্রচারণা চালালেও মঙ্গলবার থেকে প্রচারণা বন্ধ করে দেন এম এ মান্নান চৌধুরী। যদিও ১২ মে ছিল প্রত্যাহারের শেষ দিন। ফলে আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় না থাকলেও ব্যালটে থাকবে মান্নান চৌধুরীর প্রতীক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১ মে সন্ধ্যায় আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা করে বটতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মান্নান চৌধুরীকে সমর্থন দেওয়া হয়। ওই সভায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরীও তাঁকে সমর্থন জানান। একই দিন রাতের বেলা অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের অনুসারী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হক প্রার্থী হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে।
নেতা-কর্মীরা জানান, জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর সবুজ সংকেত পেয়ে মাঠে-ময়দানে জনসংযোগ করছিলেন উপজেলা পরিষদের দুবারের চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী। তবে পরে তৌহিদুল হক চৌধুরীকে সমর্থন না দিয়ে এম এ মান্নান চৌধুরীকে সমর্থন দেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী। এরপরও মাঠ ছাড়েননি তৌহিদুল হক চৌধুরী। ফলে দলীয় সমর্থন পেয়েও শক্ত দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে বেকায়দায় পড়ে যান এম এ মান্নান চৌধুরী।
আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব উদ্দিন চৌধুরীর পোস্ট করা ৫ মিনিট ৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর উপস্থিতিতে এম এ মান্নান চৌধুরী বলেন, ‘আমার নেতার সম্মতিতে আমি নির্বাচনে দাঁড়াই। কিছুদিন আগেও একটি জানাজায় আমি নেতাকে বলেছি, আমার কারণে আপনি বিব্রত হলে আমি নির্বাচন করতে চাই না।’
এম এ মান্নান চৌধুরীর সরে যাওয়া প্রসঙ্গে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এখন তৌহিদুল হক চৌধুরীর জন্য কোমর বেঁধে মাঠে নামব। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা আমাদের প্রার্থী তৌহিদুল হক চৌধুরীকে জিতিয়ে আনব।’
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আনোয়ারা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু জাফর ছালেহ বলেন, কেউ এ মুহূর্তে এসে সরে দাঁড়ালেও ব্যালটে তাঁর প্রতীক থাকবে।