আন্দোলনে প্রায় এক মাস ধরে স্থবির চায়ের রাজ্য সিলেটের পর্যটনশিল্প। ফলে লোকসানে পড়েছেন এখানকার পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ছবিটি গত বুধবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের রাধানগর এলাকায় তোলা
আন্দোলনে প্রায় এক মাস ধরে স্থবির চায়ের রাজ্য সিলেটের পর্যটনশিল্প। ফলে লোকসানে পড়েছেন এখানকার পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ছবিটি গত বুধবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের রাধানগর এলাকায় তোলা

লোকসানে চায়ের রাজ্য শ্রীমঙ্গলের পর্যটন ব্যবসায়ীরা

সবুজের সমারোহের চা-বাগানের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে বছরজুড়েই পর্যটকদের আনাগোনায় মুখর থাকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও সরকার পতনের পর নানা সহিংসতার ঘটনার প্রভাব পড়েছে পর্যটনের জন্য বিখ্যাত এই উপজেলায়। প্রায় দেড় মাস ধরে অনেকটাই পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে চায়ের রাজ্য শ্রীমঙ্গল। শুধু দেশের পর্যটকেরাই নন, শীত মৌসুমে বিদেশি যে পর্যটকেরা আসার জন্য বুকিং দেন, তাঁদের বেশির ভাগই বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন।

শ্রীমঙ্গলের পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এখানে শ খানেক হোটেল-রিসোর্টে প্রতিদিনই পর্যটক থাকতেন। পর্যটকদের ঘিরে স্থানীয় অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে শ্রীমঙ্গলে।

গত বুধ ও বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গলের পর্যটন এলাকা, হোটেল, রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ ঘুরে দেখা গেছে, এগুলোতে তেমন কোনো পর্যটক নেই। পর্যটকদের জন্য গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁগুলো খোলা থাকলেও সেখানে ক্রেতা নেই। রাধানগর এলাকার ছোট দোকানগুলো অনেকটাই বন্ধ। কর্মীরা সেখানে অলস সময় পার করছেন।

শ্রীমঙ্গল ট্যুর অপারেটর অ্যান্ড ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাসেল আলম বলেন, ‘২০২৪–এর শেষের দিকে আমরা দেশি ও বিদেশি অনেক বুকিং পেয়েছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে বেশির ভাগ ট্যুর বিদেশিরা বাতিল করে দিয়েছেন। গত দেড় মাস থেকে আমাদের কোনো কাজ নেই। আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবরে কিছু কাজ ছিল, সেগুলো বাতিল হয়ে গেছে। আমাদের বিদেশি পর্যটকেরা মূলত নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারিতে আসেন। সেটাই আমাদের ব্যবসার সময়। এই সময়ের জন্য প্রায় ছয় মাস থেকে এক বছর আগেই বিদেশি পর্যটকেরা বুকিং দেন। কিন্তু পর্যটকেরা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে, নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সব বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন। বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গে যাঁরা ট্যুর গাইড হিসেবে থাকেন, তাঁরা এর মাধ্যমেই সংসার চালান। তাঁরা এখন অনেক লোকসানে আছেন।’

শ্রীমঙ্গলের বড় জায়গা নিয়ে বালিশিরা রিসোর্ট ও নোভেম ইকো রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। এই দুটি রিসোর্টের পরিচালক পারভেজ কামাল পাশা। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই হঠাৎ করে আমরা পর্যটনে লোকসান গুনতে শুরু করি। এরপর যখন কারফিউ শুরু হলো, আমাদের কারোরই আর রুম ভাড়া হচ্ছিল না। এখন তো একেবারেই নেই। আমাদের বড় রিসোর্টগুলো বন্ধ থাকলেও অনেক খরচ করতে হয়। আমাদের ধারণা ছিল, এখন কিছুটা পর্যটক বাড়বে। কিন্তু তেমন বুকিং হয়নি। সব আগাম বুকিং বাতিল। এখন প্রতিটি হোটেল–রিসোর্টই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সাবেক সভাপতি ও গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেন বন্ধ, ভালো বাসগুলোও বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে পর্যটকেরা নিজস্ব গাড়ি নিয়ে আসতে ভয় পাচ্ছেন। তা ছাড়া এখন চুরি, ডাকাতি বেড়ে যাওয়ায় নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে কেউই ঘুরতে বের হচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লোকসানের শুরু হয়েছিল ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতি থেকে। এখন ২০২৪ সাল। কিছুদিন পরপর কোনো না কোনো ঘটনার কারণে আমাদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।’