তিস্তা নদীর ভাঙনে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের শ্রীপুর ইউনিয়নের দত্তের খামার গ্রাম বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সোমবার তোলা
তিস্তা নদীর ভাঙনে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের শ্রীপুর ইউনিয়নের দত্তের খামার গ্রাম বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সোমবার তোলা

‘সরকারের কাচে কিচু চাইনে, নদী ভাঙার হাত থাকি হামারঘরোক বাঁচান’

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদীর ভাঙনে দুই ইউনিয়নের মোট চারটি গ্রামের ১০০ বিঘা ফসলের জমি ও অসংখ্য গাছপালা বিলীন হয়েছে। এক মাস ধরে নদীসংলগ্ন এসব এলাকায় পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তার ভাঙন বেড়েছে। এতে ফসলি জমির পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে ১০ থেকে ১২টি ঘরবাড়ি।

ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো হলো শ্রীপুর ইউনিয়নের দত্তের খামার, দক্ষিণ শ্রীপুর ও ফুলমিয়ার বাজার এবং কাপাসিয়া ইউনিয়নের পুটিমারি। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে এ চারটি গ্রামের প্রায় ১০০ বিঘা উঠতি আমন ফসলের জমি নদীগর্ভে একেবারে বিলীন হয়ে গেছে।

সোমবার দুপুরে ভাঙনকবলিত এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে। ভাঙনের ভয়ে কেউ কেউ জমির আধা পাকা ধান ও গাছপালা কেটে নিচ্ছিলেন। ভাঙনের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।

গত এক মাসে তিস্তার ভাঙনে প্রায় আট বিঘা জমি হারিয়েছেন দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের কৃষক নুরুন্নবী সরকার (৬০)। তাঁর ভাষ্যমতে, এসব জমির মধ্যে পাঁচ বিঘাই আমনের জমি ছিল। ভাঙনের ভয়ে আধা পাকা ধান কাটতে হয়েছে। কিন্তু ভাঙন রোধে ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না।

সুন্দরগঞ্জের শ্রীপুর এলাকায় তিস্তার ভাঙন রোধে এ মুহূর্তে কোনো কর্মসূচি নেই। তবে শ্রীপুর এলাকায় ডান ও বাঁ তীরে প্রায় ৩১ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ করা হবে। এ জন্য সমীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এখন প্রকল্প প্রণয়নের কাজ প্রক্রিয়াধীন।
গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক

একই গ্রামের কৃষক শফিউল মুন্সি বলেন, এক মাস আগে যে জমিতে আমন ধানের ফসল ছিল, সেই জমি এখন নদীতে। এক মাসের ব্যবধানে তাঁর আধা পাকা আমন ধানসহ চার বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে।

অন্যদিকে পুটিমারি গ্রামের কৃষক আবদুল হামিদ (৫৫) বলেন, ‘নদী হামারঘরে সব কিচু কারি নিচে। এ্যাক বিগে জমি আচিলো, তাতে আমোন নাগাচিনো। পনের দিন আগোত নদীত চলি গেচে। হামরা সরকারের কাচে কিচু চাইনে, নদী ভাঙার হাত থাকি হামারঘরোক বাঁচান।’ একই গ্রামের কৃষক আবদুল জোব্বার (৫২) বলেন, ১০ দিনের ব্যবধানে তাঁর দুই বিঘা জমির ভুট্টা নদীতে চলে গেছে।

দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামে প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ ফুট এলাকা বিলীন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, এভাবে ভাঙতে থাকলে অল্প দিনের মধ্যেই গোটা গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। বিষয়টি পাউবোকে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি বলে দাবি তাঁর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক প্রথম আলোকে জানান, সুন্দরগঞ্জের শ্রীপুর এলাকায় তিস্তার ভাঙন রোধে এ মুহূর্তে কোনো কর্মসূচি নেই। তবে শ্রীপুর এলাকায় ডান ও বাঁ তীরে প্রায় ৩১ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ করা হবে। এ জন্য সমীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এখন প্রকল্প প্রণয়নের কাজ প্রক্রিয়াধীন।