বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় হওয়া মামলায় জামিনের পর কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তির পর স্বজনদের সাথে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেক বিডিয়ার সদস্য
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় হওয়া মামলায় জামিনের পর কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তির পর স্বজনদের সাথে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেক বিডিয়ার সদস্য

কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৬ বছর পর কারামুক্ত বিডিআরের সাবেক ৪১ সদস্য

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় জামিন পেয়ে ১৬ বছর পর কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন বিডিআরের সাবেক ৪১ সদস্য। আজ বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে তাঁরা মুক্তি পান।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার আবু ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় ৪১ জনের জামিনামার কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর বেলা একটার দিকে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

কারামুক্ত সাবেক বিডিআর সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিনা অপরাধে রাজনৈতিক কারণে এত বছর বন্দী রাখা হয়েছিল। আমাদের ধারণা ছিল, সরকার পরিবর্তন হলে আমরা হয়তো মুক্তি পাব। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে আজ আমরা মুক্তি পেলাম। আমরা তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।’

বন্দী সাবেক বিডিআর সদস্যদের মুক্তির খবরে সকাল থেকে তাঁদের স্বজনেরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে ভিড় করেন। আজ সকালে কারাফটকের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে ফুলের মালা নিয়ে অপেক্ষা করছেন তাঁদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা।

ঠাকুরগাঁও থেকে বাবাকে নিতে আসে মালিহা। বিডিআর বিদ্রোহের সময় তার বয়স ছিল তিন মাস। জ্ঞান হওয়ার পর কখনো বাবার আদর পায়নি। বাবাকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে মালিহা

পুরান ঢাকার হাজারীবাগ এলাকার বাসিন্দা রেহানা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী বিডিআরের একজন সদস্য ছিলেন। তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছিল। আজ আমার স্বামীকে আমরা মুক্ত অবস্থায় ফিরে পাব। তাই সকাল থেকে সন্তানদের নিয়ে অপেক্ষা করছি।’

ঠাকুরগাঁও থেকে বাবাকে নিতে এসেছে মালিহা আক্তার। বিডিআর বিদ্রোহের সময় তার বয়স ছিল তিন মাস। তখন তার বাবা কারাগারে যান। জ্ঞান হওয়ার পর কখনো বাবাকে পাননি। মালিহা বলে, ‘আমি কখনো বাবার আদর পাইনি। এত দিন পর আজ বাবা মুক্তি পাবেন। তাই আমার খুশির সীমা নেই। মুক্তির পর বাবাকে অভ্যর্থনা জানাতে সঙ্গে করে ফুলের মালা নিয়ে এসেছি।’

গাইবান্ধা থেকে সিরাজুল ইসলাম তাঁর ভাইকে নিতে এসেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই সাবেক বিডিআর সদস্য। কোনো অন্যায় না করলেও আগের সরকার বিনা দোষে তাঁদের এত বছর কারাগারে বন্দী রেখেছিল। ওই সরকারের জুলুমের কারণে ভাইয়ের জীবন থেকে এতগুলো বছর হারিয়ে গেল। এত দিন পর হলেও ভাই আজ মুক্তি পাবেন। তাই ভাইকে বরণ করে নিতে এসেছি।’

এর আগে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া ব্যক্তিরা বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় গত রোববার জামিন পান। আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ আদালত তাঁদের জামিন দেন।

১৬ বছর পর কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আজ মুক্তি পেয়েছেন সাবেক বিডিআরের ৪১ জন সদস্য

১৬ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ—বিজিবি) সদর দপ্তর ঢাকার পিলখানায় বিদ্রোহ হয়। সেদিন বিডিআরের কয়েক শ সদস্য পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালান। প্রায় দুই দিনব্যাপী চলা বিদ্রোহে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। সব মিলিয়ে ৭৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট ইতিমধ্যে রায় দিয়েছেন। মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় আছে। অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় বিচারিক আদালতে এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া ব্যক্তিরা বিস্ফোরক মামলায় গত রোববার জামিন পান।