‘ভোটের সেই মজা আর নাই বাহে। স্বাধীন হবার পর থাকি দেখি আইসোছি, হায়রে মানুষের ভোট দিবার কত আগ্রহ। সকাল সকাল কেন্দ্রে আসিবার তানে পারাপারি। বিশাল বড় লাইন, রইদত ঘামিছি, বৃষ্টিবাদলতোও ভোট দিবার আইচ্ছি। সেই দিনগিলা কুনঠে গেইল। এলা মানুষ নানান কাজত ব্যস্ত হই গেইছে। কাহো আবার জানেই না যে কায় ভোটোত দাঁড়াইছে।’
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় (পুরোনো ভবন) কেন্দ্র থেকে ভোট দিয়ে বের হওয়ার সময় আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় এসব কথা বলছিলেন হাবিবুল্লাহ হক (৬৮)।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে বীরগঞ্জসহ ১৫৬টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ চলছে। সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে, চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে ঘোড়া প্রতীকে বর্তমান চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম, আনারস প্রতীকে আবু হুসাইন, কাপ-পিরিচ প্রতীকে রেজওয়ানুল হক, দোয়াত-কলম প্রতীকে কে এম কুতুবউদ্দীন এবং টেলিফোন প্রতীকে ওয়াহিদুজ্জামান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে ভোটারদের তেমন উপস্থিতি চোখে পড়েনি। অধিকাংশ বুথেই এক-দুজন পোলিং এজেন্ট। বিশেষ করে বীরগঞ্জ মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ৭টি বুথে ছিলেন ১৪ জন পোলিং এজেন্ট ছিলেন। তবে কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের উপস্থিতি, প্রার্থীদের প্রতীকে ধরে ধরে স্লোগান ও হইহুল্লোড় চোখে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি।
দুপুর ১২টায় বীরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায়, আনসার ও পুলিশ সদস্যরা বাইরে বেঞ্চে বসে অলস সময় পার করছেন। মাঝেমধ্যে দু-একজন ভোটার আসছেন। ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন। এই কেন্দ্রে ভোটার ২ হাজার ৩১৪ জন। মোট ৬টি বুথে ভোট জমা পড়েছে ৫২৫টি, যা মোট ভোটারের ২২ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
প্রায় একই সময়ে বীরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ ভোটকেন্দ্রে ২ হাজার ৩৯৭ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৪৩০ জন, যা মোট ভোটারের ১৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। সরকারি মহিলা কলেজ ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন সোহেল রানা (৪৫)। তিনি বলেন, ‘এখন ধান কাটা–মাড়াই চলছে। মানুষ সকাল সকাল মাঠে গিয়েছে। এ জন্য ভোটার উপস্থিতি কম। দুপুরের পরে হয়তো ভোটার সংখ্যা বাড়বে।’
শহরের মসজিদ মার্কেট এলাকায় কথা হয় সাদেকুল ইসলামের সঙ্গে। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভোট দিতে যাননি তিনি। সাদেকুল বলেন, ‘সময় আছে। দেখি, চিন্তাভাবনা করি। মন চাইলে যাব, মন না চাইলে যাব না। ভোট দিলেই কী, আর না দিলেই কী? একটা ভোটের জন্য কি সব থেমে থাকবে?’
তবে প্রত্যেক নাগরিকের ভোটাধিকার প্রয়োগ করা উচিত বলে মনে করেন গীতা রানী (৪৯)। ভোট কেমন হচ্ছে, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ ভালো। কিন্তু ভোটার কম। প্রত্যেকের উচিত ভোট দেওয়া।’ তাহলে মানুষ ভোট দিতে আসে না কেন, তা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘এটা কেমন করি কহিবেন। মাইনসের মনের কাথা কওয়া যায় না।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৬৫ হাজার ৫৩৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৭৫ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৬০ জন।