দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা

মধুখালীর ডুমাইন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যকে পদ থেকে অপসারণ

ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান (বাঁয়ে) ও ইউপি সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাস
ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরের মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে প্রতিমায় আগুন দেওয়ার অভিযোগ তুলে দুই নির্মাণশ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকায় স্থানীয় ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান (তপন) ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাসকে নিজ নিজ পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউপি শাখা-১ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা গেছে। আজ রোববার জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পূরবী গোলদার ওই প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামে গত ১৮ এপ্রিল দুজন নির্মাণশ্রমিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯–এর ৩৪ (৪) (খ) (ঘ) ধারা অনুযায়ী ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

ওই অভিযোগে তাঁদের দিয়ে ইউপির ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় মর্মে মনে করে সরকার। এ অবস্থায় তাঁরা স্থানীয় সরকার আইনের ৩৪ (৪) (খ) (ঘ) ধারার অপরাধ সংঘটিত করায় একই আইনের ৩৪ (৫) ধারা অনুযায়ী তাঁদের স্বীয় পদ হতে অপসারণ করা হয়েছে। একই আইনের ৩৫ (১) (২) ধারা অনুযায়ী মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে শূন্য ঘোষণাসংক্রান্ত গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।

গত ১৮ এপ্রিল ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী সর্বজনীন কালীমন্দিরের প্রতিমার শাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকাবাসী মন্দির-সংলগ্ন পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক নির্মাণকাজে জড়িত শ্রমিকদের সন্দেহ করেন। পরে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে আটকে চার নির্মাণশ্রমিককে মারধর করা হয়। রাতেই দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

শ্রমিকদের আটকে রেখে মারধরের তিনটি ভিডিও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে শ্রমিকদের মারধরে ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামানকে অংশ নিতে দেখা যায়। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পরপরই ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য আত্মগোপন করেন। তাঁদের আজ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মধুখালীর ঘটনায় হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা ও মন্দিরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে আটজনকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশের ওপর হামলা মামলায় চারজন ও হত্যা মামলায় সাতজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

ওসি বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান অত্যন্ত চতুর প্রকৃতির লোক। তিনি মুঠোফোন ব্যবহার করছেন না। তাঁকে ও ইউপি সদস্যকে ধরতে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু এখনো তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।