মৌলভীবাজার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ১৫টি পদের ১১টিই শূন্য

এই জনবলসংকটে প্রশিক্ষণকেন্দ্রের অনুমোদিত ছয়টি বিষয়ের মধ্যে মাত্র দুটি বিষয়ে কার্যক্রম চালু আছে।

মৌলভীবাজার জেলার মানচিত্র

মৌলভীবাজারের এতিম ও প্রতিবন্ধী মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিভিন্ন পর্যায়ে পদ আছে ১৫টি। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ১১টি পদই শূন্য পড়ে আছে। এদিকে যে চারজন চারটি পদে দায়িত্বে আছেন, এই চারজনের মধ্যে আবার দুজন প্রেষণে অন্যত্র রয়েছেন। এ রকম অবস্থায় চলছে এই প্রশিক্ষণকেন্দ্র।

এই জনবলসংকটে প্রশিক্ষণকেন্দ্রের অনুমোদিত ছয়টি বিষয়ের মধ্যে মাত্র দুটি বিষয়ে কার্যক্রম চালু আছে। প্রশিক্ষক না থাকায় কেন্দ্রটি চালুর সময় থেকেই যন্ত্রপাতি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। সংকট রয়েছে সেলাই মেশিন ও কম্পিউটারের।

কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালে সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের মাতারকাপনে কার্যক্রম শুরু করে। তবে জনবলসংকটে যেমন সব কটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না, তেমনি প্রয়োজনীয় প্রচার না থাকায় চালু বিষয়েও শিক্ষার্থীর আসন প্রায় সেশনেই অসম্পূর্ণ থাকে। প্রশিক্ষণকেন্দ্রের লক্ষ্য হচ্ছে এতিম ও প্রতিবন্ধী দুস্থ মেয়ে, অপেক্ষাকৃত অসচ্ছল, মেধাবী ও দুস্থ পরিবারের সদস্য এবং সরকারি শিশু পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ বিনা খরচে আবাসিক ব্যবস্থায় থাকা-খাওয়াসহ প্রশিক্ষণ প্রদান। এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণার্থীদের বয়স ১৫ থেকে ২৫ এবং ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

কেন্দ্রে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত ছয়টি বিষয় আছে। এগুলো হচ্ছে কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন, হাউসকিপিং অ্যান্ড লন্ড্রি, ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং, ব্লক বাটিক, প্রিন্টিং এমব্রয়ডারি, ড্রাইভিং কাম অটো মেকানিকস এবং সার্টিফিকেট ইন বিউটিফিকেশন। প্রতিটি বিষয়ে ৩০টি করে আসন আছে। এ ছয়টির মধ্যে কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন এবং ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং—এ দুটি বিষয় চালু আছে। তা-ও এ দুটি চালানো হচ্ছে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া প্রশিক্ষক দিয়ে। কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন বিষয়ে শিক্ষার্থী আছেন ২৭ জন এবং ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিংয়ে আছেন ২০ জন। এর বাইরে এই কেন্দ্রে অনুমোদন নেই, কিন্তু কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নীতিমালার মধ্যে থাকা ডেইরি ফার্ম ম্যানেজমেন্ট বিষয়টি কেন্দ্রের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে ২২ প্রশিক্ষণার্থী আছেন। তিনটি বিষয় মিলিয়ে কেন্দ্রে বর্তমানে ৬৯ প্রশিক্ষণার্থী।

কেন্দ্রে পদ আছে ১৫টি। এর মধ্যে দীর্ঘদিন থেকেই ১১টি শূন্য। শূন্য পদগুলো হচ্ছে সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম), কম্পিউটার অপারেটর ব্রেইলি, উপসহকারী প্রকৌশলী, কম্পিউটার অপারেটর, বিভিন্ন বিষয়ে চারজন প্রশিক্ষক, অ্যাকাউন্ট্যান্ট কাম অফিস সুপার, স্টোরকিপার ও নার্স। আছেন জিএম (উপপরিচালক), হোস্টেল তত্ত্বাবধায়ক, একজন প্রশিক্ষক ও কেয়ারটেকার। তবে এই চারজনের মধ্যে জিএম প্রেষণে আছেন প্রধান কার্যালয়ে এবং হোস্টেল তত্ত্বাবধায়ক সিলেট শিশু পরিষদে। এ অর্থে কার্যত এই কেন্দ্রে জনবলের সংখ্যা বর্তমানে দুজন; ১৩ পদেই লোকবল নেই। জিএম এর অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক। অন্যদিকে মেশিনারি ওয়ার্কশপ, অটোমোবাইল, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতি কেন্দ্রটি চালু হওয়ার পর থেকেই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় কম্পিউটার ও সেলাই মেশিন নেই। ছয়টি কম্পিউটারের মধ্যে দুটি নষ্ট। পাঁচটি সেলাই মেশিনের মধ্যে দুটি চালু আছে।

একমাত্র প্রশিক্ষক শামীমুর রহমান বলেন, শূন্য পদ পূরণ করা না হলে ট্রেনিং ব্যাহত হবে।

মহাব্যবস্থাপকের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মৌলভীবাজার জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাবিবুর রহমান গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক দিন ধরে পদগুলো খালি। আমি তো চিল্লাচিল্লি করি। বিভাগীয় (সিলেট) সমন্বয় সভায় আলোচনা করি। টেলিফোনে বলি।’