কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার মেকুরটারী গ্রামের মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ফাহাদ আল ফারাবী। সে কয়েকটি লেন্স-মিরর, কাঠ ও পিভিসি পাইপ ব্যবহার করে টেলিস্কোপ তৈরি করেছে। ওজন ১২ কেজি। এটা দেখতে ভিড় করছেন আশপাশের লোকজন।
উপজেলার মেকুরটারী গ্রামের জয়নুল আবেদীন ও পারভীন খন্দকারের ছোট ছেলে ফাহাদ। এ বছর সে রাজারহাট পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
পরিবারের লোকজন বলেন, ফাহাদ ছোটবেলা থেকে গ্রহ, নক্ষত্র ও মহাকাশের প্রতি আগ্রহী। সেই আগ্রহ থেকে ২০২১ সালে সে টেলিস্কোপ কিনতে যায়। তবে দাম বেশি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত কেনা হয়নি। গত বছর থেকে সে টেলিস্কোপ তৈরির যন্ত্রাংশ কিনে বাসায় টেলিস্কোপ তৈরির কাজ শুরু করে। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষা থাকায় পরিবারের চাপে সে বছর টেলিস্কোপ বানানো থেমে যায়। চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষার পর আবারও কাজ শুরু করে। এ কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছিলেন ফাহাদের বড় ভাই ফাহমিদ আল জাবের।
ফাহাদ আল ফারাবী বলে, ‘ছোটবেলা থেকে মহাকাশ, গ্রহ ও নক্ষত্র নিয়ে আমার আগ্রহ ছিল। এ–সংক্রান্ত নানা বই পড়তাম। এক মাসের চেষ্টায় স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা উপকরণ দিয়ে স্বপ্নের টেলিস্কোপ তৈরি করেছি। এটি বানাতে খরচ হয়েছে ১৭ হাজার টাকা। এই সমমানের একটি টেলিস্কোপের বাজারমূল্য ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা।’ তার দাবি, এই টেলিস্কোপের মাধ্যমে তিন লাখ কিলোমিটার দূরের দৃশ্য দেখা ও ধারণ করা যায়। সরকারিভাবে সহযোগিতা করলে উপজেলার বড় বড় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য টেলিস্কোপ বানানোর ইচ্ছা আছে বলে সে জানাল।
ফাহাদের মা পারভীন খন্দকার বলেন, ‘ছোটবেলায় দাদা-দাদির কাছে চাঁদের বুড়ির গল্প শুনেছিলাম। এখন আমার ছেলে টেলিস্কোপ বানিয়ে সেই চাঁদের মধ্যে কী আছে, সেটি দেখাল। ফাহাদ দাবা খেলে। বিজ্ঞানের প্রতি তার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। তার এই টেলিস্কোপ বানানো নিয়ে প্রথম দিকে বিরক্ত হয়েছি। কিন্তু মাত্র এক মাসের মধ্যে ছেলে টেলিস্কোপ বানাল। বাসার ছাদে তার তৈরি টেলিস্কোপ দিয়ে আমাকে চাঁদের বিভিন্ন অংশ দেখাল। সেদিন আনন্দে কেঁদে ফেলেছি।’
ফাহাদের সহপাঠী রাফিউল ইসলাম বলল, ‘ফাহাদের সব গল্প মহাকাশ আর গ্রহ ও নক্ষত্র নিয়ে। বন্ধুর বানানো টেলিস্কোপে আমি পৃথিবীর বাইরের গ্রহ ও চাঁদ দেখেছি।’
রাজারহাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুর রব প্রথম আলোকে বলেন, ফাহাদ আল ফারাবী অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। অতীতেও উপজেলা পর্যায়ে বিজ্ঞান মেলায় সে তার মেধার প্রমাণ রেখেছিল। এ বছর এসএসসি পরীক্ষার পর সে একটি টেলিস্কোপ তৈরি করেছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে অভিনন্দন জানানো যায়নি। আগামী দিনে সে এ রকম কোনো কাজ করলে তার পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।