‘এবার ভাঙলে কনে যাব’

যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমিসহ বসতভিটা। সম্প্রতি পাবনার বেড়া উপজেলার নেওলাইপাড়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

পাবনার বেড়া উপজেলায় যমুনা নদীপাড়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ১৫ দিন ধরে উপজেলার দুটি ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে নদীভাঙনে ফসলসহ ১০০ বিঘার বেশি কৃষিজমি ও অন্তত ২০টি বসতবাড়ি যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে। মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কবরস্থান ও মসজিদ।

স্থানীয় লোকজন জানান, বর্ষা এখনে আসেনি, কিন্তু এরই মধ্যে যমুনার ভাঙন তাঁদের চরম দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। গত বছর থেকেই যমুনার কয়েকটি গ্রামে ভাঙন শুরু হয়। কিন্তু ১৫ দিন আগে থেকে এই ভাঙনের তীব্রতা হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। এর মধ্যে নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের নেওলাইপাড়া ও নতুন বাটিয়াখড়া গ্রামের ৫০০ মিটার অংশে ভাঙনের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি বলে গ্রামবাসী ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ জানায়। এই এলাকার ৫০ বিঘার বেশি কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন একেবারে গ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ বাড়িঘরের কাছে এসে পড়েছে। এতে পাকা বাড়ি, মসজিদ, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ অসংখ্য স্থাপনা নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু দাউদ বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের নেওলাইপাড়া গ্রামে দুই সপ্তাহ ধরে ভাঙনের তীব্রতা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। অর্ধশতাধিক বিঘা কৃষিজমি যমুনায় বিলীন হয়েছে। এগুলোতে তিল, বাদামসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করা ছিল। ভাঙন অব্যাহত থাকলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ সরকারি স্কুল, কবরস্থান, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ ঘনবসতিপূর্ণ দুই-তিনটি গ্রামের কয়েক হাজার বসতবাড়ি যমুনায় বিলীন হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে দ্রুত পাউবো কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

নেওলাইপাড়া গ্রামের জামাল ব্যাপারী বলেন, ‘কয়েক দিনের ভাঙনে খালি আমারই ৮ থেকে ১০ বিঘা আবাদি জমি যমুনায় চইল্যা গেছে। এখন নদী একেবারে বাড়ির কাছে আইস্যা পড়িছে। যেভাবে ভাঙতেছে, তাতে অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই আমার বাড়িসহ এই গ্রামের সব ঘরবাড়ি যমুনায় চইল্যা যাবি।’ নতুন বাটিয়াখড়া গ্রামের মো. ইলিয়াস বলেন, ‘গত বছরও আমার বাড়ির থ্যা যমুনা প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে ছিল। এখন একেবারে বাড়ির কাছে আইস্যা পড়িছে। এরই মধ্যে তিল, বাদামসহ আমার ১০ বিঘা জমি গাঙে গেছে। না জানি সামনে কী কপালে আছে।’

বর্ষার আগেই যমুনার ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সম্প্রতি বেড়ার নেওলাইপাড়া গ্রামে

এ ছাড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের চরনাগদাহ, হাটাইল-আড়ালিয়া, চরসাঁড়াসিয়া গ্রামেও সরেজমিনে ঘুরে নদীভাঙন দেখা গেছে, এসব গ্রামের প্রায় অর্ধশত বিঘা ফসলি জমিসহ অন্তত ১৫টি বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের শিকার হয়ে এসব গ্রামের অসহায় পরিবারগুলো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ আত্মীয়দের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

হাটাইল-আড়ালিয়া চরের কৃষক জয়নাল মোল্লা বলেন, ‘এর আগে ১০ বার ভাঙনের কবলে পইড়্যা শেষ পর্যন্ত এই জায়গায় গত বছরই নতুন বাড়ি করছি। অথচ এহানেও আবার ভাঙন শুরু হইছে। এবার ভাঙলে কনে যাব?’

এদিকে নদীভাঙন থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় মুসল্লিরা নদীপাড়ে গিয়ে একাধিকবার দোয়া ও মোনাজাত করেছেন। এ ছাড়া ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তবে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পাউবো।

পাউবো বেড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ‘ভাঙনের খবর পেয়ে আমরা একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত অংশের পরিমাণ উল্লেখ করে ভাঙনের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। শিগগিরই সেখানে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি।’