সাব্বির হোসেন (২১) ও আসলাম হোসেন (২১) দুই বন্ধু। এক পাড়ায় পাশাপাশি বসবাস। ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে খেলেছেন। একই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়েছেন। বর্তমানে পড়াশোনাও করছিলেন একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তাঁরা পৃথিবী ছেড়ে চলেও গেলেন একসঙ্গে। স্বজনেরা দুই বন্ধুকে পাশাপাশি কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন।
গতকাল শনিবার রাত আটটার দিকে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার কাদিরপুর খাদিজাতুল কোবরা মহিলা মাদ্রাসার সামনে মোটরসাইকেলের সঙ্গে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত তিন চাকার যান নসিমনের মুখোমুখি সংঘর্ষে এই দুর্ঘটনা ঘটে। পরে তাঁদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁদের মৃত্যু হয়। এই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন রাসেল হোসেন (২২) নামের আরও একজন মোটরসাইকেল চালক।
নিহত সাব্বির খোকসা উপজেলার শোমসপুর গ্রামের আমিরুল ইসলামের ছেলে আর আসলাম মৃত আজম হোসেনের ছেলে। তাঁরা কুষ্টিয়া সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। তাঁরা দুজন মামাতো-ফুপাতো ভাই। আহত রাসেল একই এলাকার মজিদ সরদারের ছেলে।
থানা-পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, খোকসা বাজার থেকে দুটি মোটরসাইকেল একসঙ্গে শোমসপুরের দিকে যাচ্ছিল। আর শোমসপুর থেকে ছেড়ে আসা নসিমনটি খোকসা বাজারের দিকে যাচ্ছিল। কাদিরপুর খাদিজাতুল কোবরা মহিলা মাদ্রাসার সামনে দুই মোটরসাইকেলের সঙ্গে নসিমনটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মোটরসাইকেল চালক সাব্বির হোসেন ও রাসেল আহমেদ এবং আরোহী আসলাম হোসেন গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের উদ্ধার করে খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেন।
তাঁদের অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টার দিকে সাব্বির হোসেন মারা যান, এরপর মারা যান আসলাম হোসেন। গুরুতর আহত রাসেল হোসেনকে রাতেই ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
দুই বন্ধুর মৃত্যুতে এলাকায় গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শেষবারের মতো তাঁদের একনজর দেখতে ভিড় করছেন মানুষ। তাঁদের কবরও পাশাপাশি খোঁড়া হয়েছে। নিহত আসলামের খালাতো ভাই ফজলুর রহমান বলেন, সাব্বির ও আসলাম আত্মীয় হলেও দুজনকে সবাই ভালো বন্ধু হিসেবে চিনতেন। তাঁদের বেড়ে ওঠা, চলাফেরা, পড়াশোনা একই সঙ্গে ও একই প্রতিষ্ঠানে। এভাবে দুজন একসঙ্গে চলে যাবেন, কেউ ভাবতে পারেননি তাঁরা।
ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন নসিমনের চালক। খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, মোটরসাইকেল ও নসিমন গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে দুজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। চালক পলাতক থাকলেও নসিমনটি জব্দ করা হয়েছে। কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।